Story (Love)



বহুদূর ভালবাসার আবেগ
রাজন আহমেদ

রুহুল হিসাববিজ্ঞানে অনার্স ২য় বর্ষে পড়ে। তাঁর অনেক পছন্দ ছিল যার মধ্যে একটি ভ্রমণ করা। তাঁর এই পৃথিবীতে কেউ নাই। ছোট বেলায় বাবা মারা যায় এবং দুই বছর আগে তাঁর মারা যায়। তাঁর ঘরে একজন কাজের লোক আছে যে রুহুলের জন্মের আগে থেকে আছে। তাঁর নাম আজিজ। রুহুলের বাবা-মা মারা যাবার পর আজিজ চাচা ই তাঁর সব দেখাশুনা করে। আজিজ চাচার ও কেউ নেই শুধু এক ছেলে আছে বিদেশে থাকে। আজিজ চাচার ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছিল টাকা-পয়সা দিয়ে রুহুলের মা। তাই বলতে গেলে আজিজ চাচা রুহুল দের পরিবার এর কাছে অনেক ঋণী। আর আজিজ চাচা ইচ্ছে করলে তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে পারত কিন্তু রুহুল একা বলে তাঁর সাথে ই থাকে। রুহুল তাকে চাচা বলে ডাকে। রুহুলের সাদা লাল এবং নীল রঙ অনেক পছন্দ। রুহুল, সোহেল, আমীন, তপু খুব ভাল বন্ধু তাদের ক্লাস এর। তারা সব সময় এক সাথে চলাচল করে। তারা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ে এবং থাকে কুমিল্লাতে ই। তারা সবাই হৈ চৈ পছন্দ করে কিন্তু রুহুল তা পছন্দ করে না। রুহুলের একটা অভ্যাস সে প্রতি রাতে দখিন দিকের জানালা খুলে চাঁদ এবং চাঁদ তাঁরার মেলা ও রাতের আকাশ দেখে। যে দিন চাঁদ উঠে না সে দিন সে যেন অস্থির হয়ে যায় তাঁর মনে অজানা ঝড় বয়ে যায়। রুহুল খুব শান্ত শিষ্ট প্রকৃতির ছেলে। তাঁর সখ হল ছবি তোলা মানে ফটোগ্রাফি। 
কলেজের ১ম বর্ষের পরীক্ষা শেষ হল কিছু দিন হল। তারা সবাই ঠিক করল যেকোনো জায়গাতে ভ্রমণ করতে হবে। কিন্তু জায়গা ঠিক হল না। ভ্রমণ করার জায়গা ঠিক করার দায়িত্ব দেয়া হল রুহুলের উপর। রুহুল ভাবতে থাকল কোথায় যাওয়া যায়। তখন ঠিক করল সিলেট যাওয়া যাক তাহলে আমার ফটোগ্রাফি ও হবে রুহুল বলল। রুহুল তাঁর বন্ধু তপুকে ফোন দিল। 
রুহুলঃ তপু, আমি ঠিক করলাম সিলেট যাওয়া যাক তুই কি বলিস?
তপুঃ অনেক দূর হয়ে যায় না আমাদের জায়গা থেকে।
রুহুলঃ আরে বেটা দূরে ভ্রমণ করা ই তো মজার।
তপুঃ যাহুক সিলেট কোথায় যাবি?
রুহুলঃ সিলেট তামাবিল বর্ডার এবং জাফলং যাওয়া যাক।
তপুঃ ওকে তাহলে তুই ফোন রাখ আমি সবার সাথে কথা বলি।
রুহুলঃ হুম বল।
কিছুক্ষণ পর তপুর ফোন আবার রুহুলের মোবাইল এ। 
রুহুলঃ কিরে সবার সাথে কথা হল?
তপুঃ হুম হল। সবাই রাজি। তবে আমাদের ক্লাস এর অন্য অনেক ছেলেরা যেতে চাচ্ছে কি করব?
রুহুলঃ তাহলে যাবে সমস্যা কোথায়?
তপুঃ তাহলে আমরা টোটাল ৮ জন।
রুহুলঃ ওকে। তোরা ঠিক কর কবে যাবি আমি যেকোনো দিন যেতে পারব তোদের যদি কোন সমস্যা না থাকে।
তপুঃ আচ্ছা ঠিক আছে কাল কলেজে সবাইকে আসতে বলি পরে দিন ঠিক করা যাবে।
রুহুলঃ ওকে ভাল থাকিস। কাল কলেজে দেখা হবে। আল্লাহ্‌ হাফেয।
আগামীকাল সবাই কলেজে আসল এবং কমন রুমে সবাই বসল। রুহুল আসতে একটু দেরি করল। 
তপুঃ কিরে এত দেরি কেন?
রুহুলঃ ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেল। তা তোদের সবার কথা হল?
তপুঃ হুম কথা হল। আজ রবিবার আগামী বৃহস্পতিবার যায় নাকি?
রুহুলঃ আচ্ছা চল আমার কোন সমস্যা নাই।
সোহেলঃ রুহুল, তোর ক্যামেরা টা সাথে নিস কিন্তু ভুলে যাস নে।
রুহুলঃ আরে বেটা আমি তো ছবি তোলার জন্য ই এই জায়গা ঠিক করা।
আমীনঃ তাহলে আজকের আলোচনা এখানে শেষ কর।
তপুঃ তাহলে কিসে যাওয়া যায় বল?
আমীনঃ ট্রেন এ যাওয়া যাক নাকি?
রুহুলঃ ঠিক আছে চল।
সোহেলঃ তাহলে সবাই আজকে টাকা দিয়ে দে মঙ্গলবার টিকেট কেটে নিবে ট্রেন এর। এসি বগির টিকেট কাটিস না আমি এসি সহ্য করতে পারি না।
আমীনঃ কোন ট্রেন এর টিকেট কাটবি?
তপুঃ পাহারিকা ট্রেন এর টিকেট কাটব। রাতে যেতে ভাল লাগবে সকালে গিয়ে পৌঁছে ঘুরতে বেড়োনো যাবে। ট্রেন এর সময় রাত ২টায় কুমিল্লা রেল ষ্টেশন এ।
রুহুলঃ ঠিক আছে তাই কর।
সোহেলঃ তাহলে সবাই এখন উঠি।
রুহুলঃ ঠিক আছে তাহলে এখন বাসায় যাওয়া যাক।
রুহুল বাসায় গিয়ে তাঁর আজিজ চাচাকে বলল ৩ দিনের জন্য ঘুরতে যাবে সিলেটে। আজিজ চাচাকে এ ও বলল ৩ দিন যেন বাড়ি ফেলে বাহিরে না যায়। 
পরদিন তপুর ফোন রুহুলের কাছে।
রুহুলঃ কিরে তপু বল কি খবর?
তপুঃ টিকেট কাটা হয়ে গেছে বৃহস্পতিবার মানে বুধবার রাতে সবাই এক সাথে ষ্টেশন আশব এক সাথে।
রুহুলঃ আচ্ছা ঠিক আছে আমাকে ফোন দিস।
তপুঃ ওকে আল্লাহ্‌ হাফেয।
তারপর সেই কাঙ্ক্ষিত বুধবার চলে আসল। তাঁর আগে আর কারো সাথে কারো দেখা বা কথা হয় নি। বৃহস্পতিবার রাত ০১টায় তপুর ফোন।
তপুঃ রুহুল তুই কোথায়?
রুহুলঃ আমি বাসায়।
তপুঃ আমরা সবাই বাসা থেকে বের হয়ে গেছি তুই বের হয়ে তোর বাসার মোড়ে আই আমরা আসছি।
রুহুলঃ আচ্ছা আমি আসছি। 
রুহুল সব কিছু নিয়ে আজিজ চাচাকে ডেকে বলল আমি যাচ্ছি। আজিজ চাচা তাকে সাবধানে যাওয়ার কথা বলল। তারপর রুহুলের বাসার মোড় থেকে সবাই ষ্টেশন এর উদ্দেশে রওউনা দিল এবং সবাই একটি অটোরিক্সা করে ষ্টেশন পৌঁছল। স্টেশন এ পৌঁছার পর-
তপুঃ তোরা দাড়া আমি ট্রেন কোথায় আছে খবর নিয়ে আসি।
রুহুলঃ আচ্ছা যা আমরা ওভারব্রিজ এর নিচে আছি। 
ট্রেন এর খবর নিয়ে আসার পর-
তপুঃ তোরা সবাই তৈরি হ ট্রেন ষ্টেশন এ ডুকছে।
সোহেলঃ আমরা সবাই তো বাসা থেকে ই তৈরি হয়ে আসলাম এখন কি তৈরি হব। (হাসতে হাসতে সোহেল)
তপুঃ দূর তোর সামনে কোন কথা ই বলা যায় না শুধু আজাইরা প্যাঁচাল পারস।
সোহেলঃ যাহুক তপু কোন বগি?
তপুঃ ট বগি সিট নম্বর- ২৪-৩১।
সেই সময় ট্রেন আসার শব্দ। ট্রেন প্লাটফর্ম এ এসে থামল এবং সবাই উঠে সিটে বসল আতপর ট্রেন ছাড়ল।
তপু ও রুহুল এক সাথে বসল। রুহুল জানালার পাশে বসল। 
তপুঃ দোস্ত দেখ একটা মেয়ে আমাদের সামনে।
রুহুলঃ হুর ডিস্টার্ব করিস না।
তপুঃ শ্যালা তুমি আকাশের দিকে তাকিয়ে কি দেখ! বললাম যে এইদিকে একটু তাকা তা না।
তারপর সবাই হৈ হুল্লোড় করতে করতে এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরল। কিন্তু এই চলন্ত ট্রেন এ রুহুল আকাশ পানে চেয়ে চাঁদ এবং তারার মেলা দেখছে এবং ডায়েরী তে কি কাব্য লিখছে।
তাঁর কাব্য গুলো ছিল এমন,
এক ঝাঁক তাঁরা আর একটি চাঁদ কি সুন্দর মিলন মেলা,
চাঁদ যেন আকাশকে রাঙিয়ে তুলছে নতুন মিলন মেলায়।
এই মুগ্ধ মিলন যেন কেঁড়ে নিচ্ছে আমার হৃদয়। 
তারপর রুহুলের টয়লেট যাওয়ার দরকার হয়ে পরল। রুহুল টয়লেটে যাওয়ার জন্য হেঁটে সামনে যাচ্ছে। হঠাৎ কেউ একজন তাকে ডাকল এই চা বলে তা ও আবার মেয়ের কণ্ঠ। রুহুল একটি সাদা ফুল হাতা শার্ট পড়েছে কিন্তু তাই বলে ট্রেন এর খাবার লোকদের মত নই। রুহুল পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে একটি মেয়ে। মেয়েটি বগির ১ নম্বর সিটে বসে আছে। সিঙ্গেল সিট। রুহুল যখন পিছনে ফিরে তাকাল তখন মেয়েটি ও থমকে গেল। তারপর-
মেয়েটিঃ সরি আমি আপনাকে চা দেয়ার লোক মনে করেছিলাম। আমি ভাল করে দেখিনি শুধু সাদা দেখে ডাক দিলাম।
রুহুলঃ এতে সরি বলার কিছু নেই মানুষের ভুল হতে ই পারে।
মেয়েটিঃ না এটি আপনার মান-মর্যাদার উপর আঘাত হানল না।
রুহুলঃ যারা চা বিক্রি করে তাদেরও মান-মর্যাদা আছে তাই এইভাবে বলবেন না। 
এই বলে রুহুল টয়লেটে চলে গেল। ৫-১০ মিনিট পর রুহুল টয়লেট থেকে ফ্রেশ হয়ে সিটে যাওয়ার জন্য যাচ্ছিল। হঠাৎ আবার ডাক এস্কিউস মি বলে। রুহুল চেয়ে দেখে আবার সেই মেয়েটি। তারপর-
রুহুলঃ হা বলুন।
মেয়েটিঃ সরি।
রুহুলঃ কেন?
মেয়েটিঃ চা বিক্রেতাদের অপদস্থ করার জন্য।
রুহুলঃ তা সরি বলার কিছু নেই শুধু নিজে তাদেরকে একটু ভাল চোখে দেখলে ই হল। যাহুক আপনার চা পেয়েছেন?
মেয়েটিঃ না এখনও পায় নি।
রুহুলঃ যদি চা খেতে চান তাহলে খাবার বগিতে গিয়ে খেতে হবে।
মেয়েটিঃ না থাক এত রাতে একা যাওয়াটা ঠিক হবে না।
রুহুলঃ আচ্ছা যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা প্রশ্ন করতে পারি।
মেয়েটিঃ হুম করতে পারেন।
রুহুলঃ আচ্ছা এত রাতে আপনি চা খুঁজছেন কেন?
মেয়েটিঃ আমি রাতে গান শুনি এবং আকাশ দেখতে দেখতে এক কাপ চা পান করি। তাই অভ্যাস হয়ে গেল। (একটু হাসি দিয়ে বলল)
রুহুলঃ যদি কিছু মনে না করেন আমার সাথে গিয়ে এক কাপ চা খেয়ে আসতে পারেন। কারন তা না হলে হইত রাতের আকাশ দেখাটা ভাল হবে না।
মেয়েটিঃ আপনি ঘুমাবেন না?
রুহুলঃ আমার কাহিনী আপনার মতই যাহুক যদি যেতে চান তাহলে যেতে যেতে বলতে পারি।
মেয়েটিঃ আচ্ছা চলুন।
রুহুলঃ একটু অপেক্ষা করেন আমার সিটে আমার ডায়েরী এবং ক্যামেরা আছে নিয়ে আসি।
মেয়েটিঃ আচ্ছা নিয়ে আসেন।
রুহুলঃ চলুন নেয়া হয়ে গেছে।
তাঁরা দুজন খাবার বগিতে গেল ঠিক কিন্তু সেখানে সবাই ঘুমিয়ে আছে এবং একজন জেগে গান শুনছে। তারপর রুহুল তাকে এক কাপ চা দেয়ার জন্য বলল। কিন্তু সে বলল অপেক্ষা করতে হবে অনেকক্ষণ তাছাড়া একটু টাকা বেশি দিতে হবে। রুহুল মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল এবং মেয়েটি রাজি হল। 
মেয়েটিঃ আচ্ছা আপনার কাহিনী আমার মত কি কাহিনী যদি একটু বলতেন?
রুহুলঃ আমি রাতে জেগে আকাশ দেখি, দেখি চাঁদ তাঁরার মেলা। কখনও দু একটা ছবি তুলি চাঁদের। দখিন দিকের জানালা খুলে।
মেয়েটিঃ আমার ভাইরাস আপনার মধ্যে ও আছে। আর হে চা দুটার কথা বলুন।
রুহুলঃ আমি চা খায় না।
মেয়েটিঃ আজ আমার জন্য হলেও খান মানে আমার সাথে এসেছেন এ জন্য।
রুহুলঃ আচ্ছা ঠিক আছে খাব। তা এতক্ষণ কথা বললাম আপনার নাম, কি করেন কোথায় থাকেন কিছুই জানা হল না।
মেয়েটিঃ আমার নাম অর্পিতা আক্তার নিঝুম থাকি ফেনী ডাক্তারপাড়াতে। আর পড়ালেখা করি দ্বাদশ শ্রেণীতে ফেনী সরকারি কলেজে। এখন আপনার অবস্থা বলুন।
রুহুলঃ আমার নাম নাইফ আহমেদ রুহুল। থাকি কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়াতে। আর পড়ালেখা করি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে ভিক্টোরিয়া কলেজে।
নিঝুমঃ কোথায় যাচ্ছেন?
রুহুলঃ সিলেটে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে। আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
নিঝুমঃ খালার বাসায় যাচ্ছি সাথে আমার দুজন বান্ধবী আছে। ১ম বর্ষের পরীক্ষা শেষ তাই এই বেড়ানো।
রুহুলঃ আমার ও ১ম বর্ষের পরীক্ষা শেষ করে ঘুরতে এলাম।
(এর ফাঁকে চা আসল এবং খেতে খেতে কথা হচ্ছে) 
নিঝুমঃ তা রাতের আকাশে কি খুঁজে পান?
রুহুলঃ আপনি কি পান তা আগে বলেন।
নিঝুমঃ না আমি আগে প্রশ্ন করেছি আমার টা আগে বলেন।
রুহুলঃ আমি রাতের আকাশে দেখতে পায় জীবনের হাজারো রঙ। এখন আপনার টা বলেন?
নিঝুমঃ রাতের আকশে যেন আমার হৃদয় মিশে আছে। ঐ দূর আকাশ যেন শুধু আমাকে ডেকে যাচ্ছে।
রুহুলঃ ভাল। আপনি কি কবিতা, কাব্য কিছু লিখেন?
নিঝুমঃ না লিখি না শুধু এই সব অনুভব করি। আপনি তো এইসব লিখেন কারন দেখলাম আপনার ডায়েরী আছে।
রুহুলঃ হা টুকটাক কিছু লেখালেখি করি।
নিঝুমঃ আমি কি আপনার ডায়েরী টা পড়তে পারি।
রুহুলঃ হা পড়তে পারেন।
এই বলে নিঝুম রুহুলের হাত থেকে ডায়েরী টা নিল এবং চা খাওয়া শেষ হয়ে গেল। তারপর-
নিঝুমঃ চলুন সিটে যাওয়া যাক। আমি বসে আপনার ডায়েরী পড়ব এবং পড়ে আপনার সিটে দিয়ে আসব। আর ততক্ষণ আপনি আকাশ দেখুন আর কিছু আজ লিখতে হবে না।
রুহুলঃ আচ্ছা ঠিক আছে। 
দুই জন দুই সিটে বসে পড়ল। রুহুল আকাশ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পরল। আর নিঝুম ডায়েরী পরছে। কিছুক্ষণ পর নিঝুম ও ঘুমিয়ে পরল। হঠাৎ রুহুল শুনতে পেল তাকে যেন কে ডাকছে। চেয়ে দেখে তপু। তারপর-
তপুঃ এই রুহুল ট্রেন চলে এসেছে নেমে পর।
রুহুলঃ আচ্ছা নামছি।
তখন সবাই নেমে পরল এবং সেখান থেকে বাসে উঠল তামাবিল যাওয়ার জন্য। পথিমধ্যে রুহুলের মনে হল তাঁর ডায়েরী নিঝুম এর কাছে রয়ে গেছে। রুহুল ভাবছে নিঝুম এর নম্বর ও নাই তাহলে সে কিভাবে ঐ ডায়েরী পাবে। কিন্তু সে কোন উপায় না দেখে ডায়েরীর আশা ছেড়ে দিল। ২ ঘন্টা পর তামাবিল গিয়ে পৌঁছল এবং সবাই মিলে একটি হোটেল ভাড়া করল ২ দিনের জন্য। সবাই রুমে গিয়ে রেস্ট নিল কিন্তু রুহুল একেবারে ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সোহেলঃ কিরে তুই আমাদের সাথে ঘুরতে যাবি না?
রুহুলঃ না দোস্ত তোরা যা আমি একটু ঘুমাবো। আমার ক্যামেরা সাথে নিয়ে যা।
তপুঃ শ্যালা সারা রাত ঘুমিয়ে এখন আবার ঘুমাবে।
আমীনঃ এই সবাই চল ঘুরতে বের হয়। চল...চল... 
এই বলে সবাই ঘুরতে বের হয়ে গেল। আর এই দিকে রুহুল ঘুমাচ্ছে। দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল সবাই আমার রুমে ফিরল রুহুলের দুপুরের খাবার নিয়ে। রুহুল খেয়ে বাহিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল সাথে ক্যামেরাটা নিয়ে। আর এই দিকে রুহুলের ফ্রেন্ড সবাই ঘুমে। রুহুল রুম থেকে বেরিয়ে পরল। রুহুল তাঁর ফটোগ্রাফি শুরু করল হঠাৎ রুহুলের মোবাইল এ কল।
রুহুলঃ হ্যালো।
ঐ পার থেকে একটি মেয়ে। 
নিঝুমঃ হ্যালো।
রুহুলঃ মেয়ের কণ্ঠ শুনে বলল কে আপনি?
নিঝুমঃ বলল আমি নিঝুম।
রুহুলঃ ও আচ্ছা কেমন আছেন?
নিঝুমঃ ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন?
রুহুলঃ এই কোন এক রকম।
নিঝুমঃ আপনার ডায়েরী দিতে আমার মনে নেই পরে অনেক খুঁজাখুঁজি করে আপনার নম্বরটা ডায়েরীতে পেলাম এবং কল দিলাম। যাহুক আপনি এখন কোথায় আছেন?
রুহুলঃ আমি তামাবিল।
নিঝুমঃ তাহলে আপনার ডায়েরী নিবেন কিভাবে?
রুহুলঃ কিভাবে নিব আমি নিজে ও তো কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। হুম একটা পন্থা আছে যদি আপনি কিছু মনে না করেন আমি বলতে পারি।
নিঝুমঃ হা বলুন কিছু মনে করব না।
রুহুলঃ আপনি তামাবিল এসে পরুন তাহলে ঘুরতে ও পারবেন আর আমার ডায়েরীটা ও দেয়া হয়ে যাবে।
নিঝুমঃ আচ্ছা আসতে আমার কোন সমস্যা নেই যদি আমাকে খালার বাসা থেকে যেতে দেয়। আর যদি আসি তাহলে সাথে আমার দুই বান্ধবীকে ও নিয়ে আসব।
রুহুলঃ আচ্ছা নিয়ে আসেন তাতে আমার কোন সমস্যা নেই তাঁরা ও আনন্দ পাবে।
নিঝুমঃ ওকে আমি আপনাকে পরে জানাব আমি আগামীকাল আসব কি না!
রুহুলঃ আচ্ছা ঠিক আছে জানাবেন। তাহলে ভাল থাকবেন। আল্লাহ্‌ হাফেয।
নিঝুমঃ আল্লাহ্‌ হাফেয।
কিছুক্ষণ পর সূর্য ডুবার সময় হল আর এর কিছু সুন্দর ছবি নিল রুহুল। তাঁর মধ্যে রুহুলের কণ্ঠে আবারো কাব্যিক কথা একা একা বলছে। এর মধ্যে আমীনের কল রুহুলের মোবাইল এ। 
আমীনঃ কিরে তুই কোথায় আছিস?
রুহুলঃ আমি সূর্য ডুবা দেখছি নদীর পার বসে।
আমীনঃ তা সন্ধ্যা হয়ে গেল তুই এখনও হোটেলে আসছিস না! এলাকাটা তো তেমন ভাল না সন্ধ্যার পর সবাই ঘুমিয়ে যায়।
রুহুলঃ আরে কিছু হবে না।
আমীনঃ কিছু যদি হয়ে যায় তখন কি হবে!
রুহুলঃ আচ্ছা বাবা আমি আসছি। এবার ফোন টা তো রাখ।
রুহুল সন্ধ্যার পর হোটেলের উদ্দেশে রউনা হল। ১৫ মিনিট পর হোটেলে পৌঁছল। পৌঁছে দেখে সবাই কার্ড খেলছে। রুহুল আবার কার্ড খেলা পারে না দাবা পারে। তাই রুহুল দাবা নিয়ে বসে গেল আমীনের সাথে। আর তখন সবাই রুহুলের তোলা কিছু সুন্দর ফটোগ্রাফি দেখছে। তাঁরা সবাই আফসোস করছে যে এমন সুন্দর মোমেন্ট টা মিস করল। যাহুক তপু রুহুলের মোবাইল নেয়ার জন্য রুহুলের কাছে আসল। 
তপুঃ দোস্ত তোর মোবাইল টা একটু আমাকে দে আমার বাসায় একটু কল করি। আমার মোবাইল এ ব্যালেন্স নাই।
রুহুলঃ এই নে তবে বেশি টাকা খরচ করিস না। কারন আশেপাশে কোন ফ্রেক্সিলোড এর দোকান নেই।
তপুঃ আচ্ছা ঠিক আছে রে বাবা এবার দে না।
এই বলে তপু বারান্দায় গিয়ে বাসায় কথা বলতে লাগল। ৫ মিনিট এর মত অতিক্রান্ত হল তপু কথায় ই বলছে। হঠাৎ বিপ বিপ শব্দ ওয়েটিং এ কে যেন আছে। তপু বোঝতে পারছে। তপু কথা বলার ফাঁকে ই দেখল সেভ ছাড়া একটি নম্বর এর কল। তপু কথা বলা শেষ করে কলটি রিসিভ করল। 
তপুঃ হ্যালো।
নিঝুমঃ হ্যালো।
তপু মেয়ের কণ্ঠ শুনে কিছুটা অবাক হল। 
তপুঃ আপনি কাকে চাচ্ছেন?
নিঝুমঃ এটা কি রুহুলের নম্বর না?
তপুঃ জি আমি রুহুলের ফ্রেন্ড।
নিঝুমঃ ও আচ্ছা রুহুলকে একটু দেয়া যাবে।
তপুঃ হা আপনি লাইনে থাকেন আমি ডেকে দিচ্ছি।
এই বলে তপু বারান্দায় দাঁড়িয়ে রুহুলকে দেখে বলল তোর ফোন এসেছে। কথা বল। রুহুল ফোন হাতে নিল এবং তপু রুমের ভিতরে চলে গেল। ভিতরে গিয়ে তপু সবাইকে বলল রুহুলের মোবাইল এ একটি অপরিচিত মেয়ের ফোন। সবাই উৎসুক হয়ে রুহুলের ঘঠনা জানতে বসে রইল। আর এ দিকে রুহুল ও নিঝুম কথা বলছে। 
রুহুলঃ হ্যালো।
নিঝুমঃ জি কেমন আছেন?
রুহুলঃ এই তো আছি কোন এক রকম। আপনি কেমন আছেন?
নিঝুমঃ হুম ভাল। আর শুনুন আমি আগামীকাল আসছি তামাবিল। অনেক কষ্ট করে খালাকে বোঝিয়ে রাজি করালাম। সাথে আমার দু বান্ধবী তমা এবং শিলা আসছে। আপনার ডায়রির জন্য আমাকে যেতে হচ্ছে।
রুহুলঃ একটু কষ্ট করে আমার ডায়রি খানা দিয়ে যান। আর আপনি হোটেল তামাবিল এর মোড়ে এসে আমাকে কল দিলে আমি আসব। আপনি কখন আসবেন?
নিঝুমঃ আমি বিকেলে আসব দুপুরে রউনা দিয়ে। কারন বিকেলে ঐ সব এলাকায় ঘুরতে মজা।
রুহুলঃ আচ্ছা ঠিক আছে আসেন। তাহলে কাল দেখা হবে। ভাল থাকবেন।
নিঝুমঃ ভাল থাকবেন আল্লাহ্‌ হাফেয।
কথা শেষ করে রুহুল রুমে প্রবেশ করে ই কত প্রশ্নের যে সম্মুখীন যে তাকে হতে হল। তখন রুহুল সব কিছু খুলে বলল। তখন সবাই বলতে লাগল রুহুল মেয়েটির প্রেমে পড়ে গেছে। কিন্তু রুহুল বলল না তেমন কিছু না। রাখ বাদ দে এসব। সবাই অধীর আগ্রহে আগামীকাল নিঝুমকে দেখার জন্য। 
সকালে ঘুম থেকে উঠে খাবার খেয়ে সবাই জাফলং জিরো পয়েন্ট দেখতে রউনা হল। সবাই সে খানে গিয়ে অনেক কিছু ই কিনল। কিন্তু রুহুল কিছুই কিনল না। হঠাৎ রুহুলের একটি টুপির দিকে নজর পরল তখন ভাবল এটা নিঝুমকে দেয়া যেতে পারে তাতে কোন সমস্যা হবে না। রুহুলের বন্ধুরা টুপিটা দেখে খুব পছন্দ করল লাল এর মধ্যে সবুজ লেডিস টুপি। তা ছাড়া রুহুলের বন্ধুরা একটা ওড়না পছন্দ করল টুপির সাথে ম্যাচ করে। যাহুক সবাই সব কিছু দেখে হোটেলের উদ্দেশে রউনা হল এবং হোটেলে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই রেস্ট নিচ্ছে।
বেলা ৪ টা বাজে প্রায় বিকেল হয়ে যাচ্ছে। এদিকে নিঝুম এর কোন খবর নেই। রুহুলের চোখ একটু ঘুমে লেগে গেল। তখন হঠাৎ রুহুলের মোবাইল টি বেজে উঠল।
রুহুলঃ হ্যালো।
নিঝুমঃ জি আমি আপনার হোটেলের মোড়ে দাঁড়িয়ে আপনি তারাতারি আসুন।
রুহুলঃ আচ্ছা ঠিক আছে আসছি আমি। 
তারপর রুহুল তাঁর সব ফ্রেন্ড দেরকে নিয়ে রউনা দিল মোড়ের উদ্দেশে। রুহুল গিয়ে দেখে তাঁরা তিন বান্ধবী দাঁড়িয়ে আছে। নিঝুম সাদা এবং নীল মিশানো একটি সালওয়ার কামিজ পরে আছে। ঠিক যেন রুহুলের পছন্দের ঠিকটি পড়ে এসেছে। যাহুক রুহুল গেল সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল নিঝুম এর। এবং নিঝুম তাঁর বান্ধবীদের ও রুহুল এবং রুহুলের সব ফ্রেন্ড দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। তারপর তাঁরা সবাই দুটি অটোরিক্সা করে রউনা দিল। কিন্তু রুহুল হঠাৎ চেয়ে দেখল তাঁর পাশে নিঝুম বসে আছে।
রুহুলঃ একি আপনি এইটা তে কেন?
নিঝুমঃ ঐটা তে আপনার ফ্রেন্ড রা বায়না ধরল আমার বান্ধবীদের সাথে বসবে তাই আমি বসার জায়গা পেলাম না এটাতে চলে আসলাম। 
সবাই তামাবিল গিয়ে নামল। এবং রুহুল অটোরিক্সা এর ভাড়া নিয়ে নিঝুম এর সাথে তর্কাতর্কি করতে করতে সবাই চলে গেল তাদের দুজনকে ফেলে। এমনকি নিঝুম এর বান্ধবী রা ও। যাহুক অবশেষে ভাড়া দিল নিঝুম। নিঝুম আর রুহুল হাঁটছে কথা বলতে বলতে।
রুহুলঃ তারপর আপনার খবর কি বলুন?
নিঝুমঃ কি খবর কিছুই না।
রুহুলঃ আপনি কি এখানে আগে কখনও এসেছেন?
নিঝুমঃ হা খালার বাসায় যতবার আসি এদিকে আসা পরে।
রুহুলঃ তো আমার ডায়রি টা কোথায়?
নিঝুমঃ ডায়রি তমার বেগে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবেন। আচ্ছা আপনি আপনার ডায়রিতে এত কষ্টের কথা লিখে রেখেছেন কেন?
রুহুলঃ জীবন টা যে এত কষ্টের তাই।
নিঝুমঃ এখনি জীবনের এত কষ্ট কোথায় দেখলেন?
রুহুলঃ আমার জীবনের কষ্টের সব কিছু দেখা শেষ হয়ে গেছে যখন আমি আমার বাবা-মাকে হারায়।
নিঝুমঃ সরি আমি মনে হয় নিজের অজান্তে ই আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম।
রুহুলঃ না যা সত্য তা বলা কষ্ট না। আপনার কি নীল এবং সাদা রঙ খুব পছন্দ?
নিঝুমঃ না তেমন না। কেন আপনার পছন্দ?
রুহুলঃ হা আমার পছন্দ।
নিঝুমঃ কেন? এত রঙ থাকতে এই দুটি রঙ পছন্দ কেন?
রুহুলঃ না আমি এই দুটি বাদে লাল রঙ ও পছন্দ করি। আর নীল হল বেদনার প্রতীক আর সাদা যেন চোখের পানি আর লাল যেন রাগ অভিমান করা এক কষ্টের গালিচা।
নিঝুমঃ আপনার কথার মানে অনেক কঠিন। আমি কিছুই বোঝি নি।
রুহুলঃ বোঝেন নি। আকাশ যখন নীল থাকে তখন আমার কাছে মনে হয় আজ বেদনা চরম প্রান্তে পৌঁছে গেছে। আর তাঁর ওপর যখন সাদা মেঘ তখন মনে হয় আজ যেন আকাশ কাঁদছে। আর আকাশ লাল হয়ে যখন সন্ধ্যা হয় তখন মনে হয় আজ আমার উপর অভিমান করে আছে।
নিঝুমঃ আসলে আপনাকে দেখে বোঝা যায় না আপনি এত কাব্যিক মানুষ।
রুহুলঃ আমি না হয় এই সব কারনে আকাশ দেখি তো আপনি দেখেন কেন?
নিঝুমঃ আমার কষ্ট কিছু দূর করার জন্য।
রুহুল আপনার আবার কি কষ্ট?
নিঝুমঃ এমনি মনে হয় জীবনটা অনেক কষ্টের।
রুহুলঃ যাহুক আপনার পরিবারে কে কে আছেন?
নিঝুমঃ শুধু আমার বাবা আছে।
রুহুলঃ যাহুক আপনার তো বাবা আছে আমার তো তাও নেই। অনেক দূর হাটা হল চলুন এবার নদীর পার একটু বসা যাক।
নিঝুমঃ হা চলুন।
রুহুলঃ যদি কিছু মনে না করেন আমি আপনার জন্য ক্ষুদ্র কিছু গিফট এনেছি আপনি রাখলে খুশি হব।
নিঝুমঃ কি গিফট?
রুহুলঃ এই যে একটি টুপি ও একটি ওড়না। কারন এই দুইটা পরলে আপনাকে হইত পাহাড়ি মেয়েদের মত লাগবে এই পাহাড়ি এলাকার মধ্যে।
নিঝুমঃ আচ্ছা তাই নাকি তাহলে পড়ে দেখি কেমন লাগে।
রুহুলঃ হুম ভাল ই তো লাগছে। (পড়ার পর)
নিঝুমঃ তাই আমি তো দেখতে পাচ্ছি না কারন আয়না নেই।
রুহুলঃ দেখবেন আপনার বান্ধবীরা ও এইগুলো পছন্দ করবে। সকালে জিরো পয়েন্ট এ গিয়ে এগুলো কিনে আনি।
নিঝুমঃ ও তাই। দেখুন সূর্য টা কেমন লালরং ধারন করছে।
রুহুলঃ হা সূর্য কিছুক্ষণ পরে ডুবে যাবে তাই এমন হয়ে যাচ্ছে। আপনাকে তো মনে হচ্ছে সূর্যের সাথে মিশে লালে লালে একাকার হয়ে যাচ্ছেন।
নিঝুমঃ হা আমারও তাই মনে হচ্ছে যাহুক এখনি রউনা দিতে হবে বাসার উদ্দেশে চলুন এগিয়ে যাওয়া যাক। 
কিছু সামনে যেতে তমা, শিলা ও রুহুলের বন্ধুরা।
শিলাঃ কিরে নিঝুম তোর এগুলো তো খুব সুন্দর।
নিঝুমঃ হুম রুহুল গিফট করেছে।
তপুঃ নিঝুম, আপনাকে কিন্তু ভারি সুন্দর লাগছে।
নিঝুমঃ ধন্যবাদ। তমা ডায়রি টা দে যেটা তোর বেগে রাখার কথা বলেছিলাম।
তমাঃ আমি তো শুনি নি।
নিঝুমঃ আরে এখন কি বলসস!
তমাঃ হা ঐ ডায়রি তো তোর কম্পিউটার টেবিল এর ওপর রেখে আসলাম।
নিঝুমঃ রুহুল আমি এখন কি করব? যেটার জন্য আসা সেটা আনা হল না।
রুহুলঃ কি আর করা যাবে পরে এক সময় নিব।
নিঝুমঃ যাহুক আমাদেরকে এক্ষনি বাসে উঠে চলে যেতে হবে।
রুহুলঃ চলুন আপনাদেরকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
তারপর তাদেরকে বাসে তুলে রুহুল এবং তাঁর বন্ধুরা হোটেলে চলে এল। এবং রাতের খাবার সেরে সবাই ব্যাগ গুছানো শুরু করল কারন আগামীকাল সকালে তাঁরা কুমিল্লার উদ্দেশে রউনা হবে। নিঝুম বাসায় পৌঁছে গিয়ে রুহুলকে জানাল। যাহুক সবাই রাতে ঘুমিয়ে পরল।
পরের দিন সকাল বেলা সবাই খাবার সেরে হোটেল এর বিল দিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে পরে কুমিল্লার উদ্দেশে। সবাই বাসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল। বাসে উঠল। বাস ছারল এমন সময় নিঝুম এর কল রুহুলের মোবাইল এ। 
নিঝুমঃ হ্যালো।
রুহুলঃ হা কেমন আছেন?
নিঝুমঃ ভাল আছি। আপনার এখানে এত শব্দ কিসের?
রুহুলঃ সরি আপনাকে বলা হয় নি আমরা কুমিল্লাতে চলে যাচ্ছি। একটু লাইনে থাকেন আমি হেডফোন লাগিয়ে কথা বলছি। এবার বলুন।
নিঝুমঃ আরও কিছু দিন এখানে থেকে জেতেন? আরও ভালভাবে ঘুরে বেরাতে পারতেন।
রুহুলঃ না চলে যায় আমার এক ফ্রেন্ড এর বাবা অসুস্থ।
নিঝুমঃ ও আচ্ছা তাহলে চলে যাওয়া ই ভাল।
রুহুলঃ একটি কথা বলব কিছু মনে করবেন?
নিঝুমঃ বলুন। আপনি এত অনুমতি নেন কেন কথা বলতে গেলে?
রুহুলঃ না যদি আপনি আবার কিছু মনে করেন। আমার মনে হচ্ছে গতকাল আমার জীবনের একটু সুখের দিন কাটালাম।
নিঝুমঃ মানে।
রুহুলঃ না মানে ইয়ে কাল অনেক কথা আপনাকে বললাম তো তাই মনে হল একটু সুখের দিন কাটালাম গতকাল।
নিঝুমঃ ও তাই (একটু হেসে)।
রুহুলঃ আপনি হাসছেন?
নিঝুমঃ কেন হাসতে মানা আছে নাকি?
রুহুলঃ না তা কেন থাকবে। আমি আজ আপনার প্রথম হাসির শব্দ শুনতে পেলাম।
নিঝুমঃ কেন আমি তো গতকাল ই অনেক বার হেসেছি। আপনি দেখেন নি?
রুহুলঃ না মানে আজকের হাসিটা কেন যেন ভিন্ন মনে হচ্ছে।
নিঝুমঃ কি যেন কবিদের ভাষা আমি বোঝি না। (আবারো হেসে)
রুহুলঃ কে কবি?
নিঝুমঃ কেন আপনি?
রুহুলঃ আমি যদি কবি হয় তাহলে কবিদের অবমাননা হবে।
নিঝুমঃ কি জানি আমি এত কিছু জানি না আমার কাছে আপনি ই কবি।
রুহুলঃ যা হোক কি করছেন?
নিঝুমঃ এই যে আপনার সাথে কথা বলছি।
রুহুলঃ তাছাড়া?
নিঝুমঃ আর কিছুই না।
রুহুলঃ বাসায় যাবেন কবে?
নিঝুমঃ দেখি আগামীকাল নইত পরশু।
রুহুলঃ আচ্ছা তাহলে রাখি?
নিঝুমঃ কেন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না?
রুহুলঃ না তা হবে কেন।
নিঝুমঃ না আমি এমনি তে ভাল মানুষ না তাই হইত কেউ আমার সাথে কথা বলতে চাই না।
রুহুলঃ না আপনি ভুল ভাবছেন।
নিঝুমঃ ভাল থাকবেন। আল্লাহ্‌ হাফেয।
এই বলে নিঝুম মোবাইল রেখে দিল। রুহুল ভাবছে কি করা যায়। তারপর রুহুল ভাবল যে যা করার বাসায় গিয়ে করব। প্রায় সন্ধ্যা ৭ টার দিকে সবাই যার যার বাসায় পৌছাল। রুহুল বাসায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে নিঝুমকে কল দিল কিন্তু মোবাইল অফ। রুহুল কিছুই বোঝতে পারছে না হঠাৎ করে এমন রাগ। রুহুল নিঝুম এর এই ঘঠনার কারনে মনে খুব আঘাত পেল। রাতে না খেয়ে ই ঘুমিয়ে গেল। আজিজ চাচা অনেক করে বলল কিন্তু কিছুতে ই খেল না। মাঝ রাতে উঠে দখিন দিকের জানালা খুলে দেখল আকাশে চাঁদ নেই। তখন ই মনে হল যে আজ আমার আবারো দুঃখের দিন হাজির হল। রুহুল আবারো কল দিল নিঝুম এর মোবাইল এ কিন্তু মোবাইল বন্ধ। রুহুল শুধু একটা এসএমএস করল এবং বলল সবাই আমার ওপর অভিমান করে তাই বলে আজ আকাশের চাঁদ ও নেই, আসলে আমি এই পৃথিবীতে থাকি কেউ চাই না। নিঝুম মাঝ রাতে মোবাইল খুলে এসএমএস টা পেল সাথে সাথে কল দিল রুহুলকে।
নিঝুমঃ তুমি খুব কষ্ট পেয়েছ?
রুহুলঃ কষ্ট পাব না এত কষ্ট দিলে।
নিঝুমঃ সরি তুমি বলে ফেললাম।
রুহুলঃ যেটা মনের ভিতর আছে তা প্রকাশ করতে দাও না কেন শুধু ধরে রেখেছ।
নিঝুমঃ মানে।
রুহুলঃ না আমরা তো ফ্রেন্ড হতে পারি।
নিঝুমঃ জানি না আমি কিছুই।
রুহুলঃ আমি এখনও কিছু খায় নি।
নিঝুমঃ কি বল খাও নি কেন?
রুহুলঃ একজন যে আমার ওপর অভিমান করে আছে তাই।
নিঝুমঃ আচ্ছা এখন খেয়ে নাও তারপর আগামীকাল আমি বাড়িতে আসব তাই সন্ধায় কথা হবে।
রুহুলঃ ভাল থেক।
নিঝুমঃ আল্লাহ্‌ হাফেয। 
তারপর রুহুল তপুকে ফোন দিল রাতে ই। তপু ফোন রিসিভ করল।
রুহুলঃ কিরে এখনও ঘুমাস নি?
তপুঃ না দোস্ত ঘুম আসছে না প্রিয়ার সাথে কথা বলছিলাম। (প্রিয়া তপুর গার্ল ফ্রেন্ড)
রুহুলঃ ও তাই তো বলি বাবু এখনও সজাগ কেন!!
তপুঃ তুমি তো এসবে পর নি তাই তুমি কেমন করে বোঝবে। যাহুক কেন কল করেছিস বল।
রুহুলঃ শুন কাল একটু কলেজে আসবি? তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
তপুঃ কাল আমি আসতে পারব না। কাল নানুর বাড়িতে যাব নানুর শরীর খারাপ পরশু বুধবার তখন আসব।
রুহুলঃ আচ্ছা পরশু ১০টায় আসিস।
তপুঃ ওকে বাই।
রুহুলঃ বাই।
রুহুল খেয়ে ঘুমিয়ে পরল। সকালে আজিজ চাচা রুহুলকে পত্রিকা দিল পরার জন্য। তারপর-
আজিজ চাচাঃ রাতে পরে আবার খাবার খেলে কেন?
রুহুলঃ না এমনি।
আজিজ চাচাঃ দেখ রুহুল আমি রাতে সব শুনেছি। মেয়েটি কে?
রুহুলঃ কোন মেয়ে?
আজিজ চাচাঃ দেখ তুমি আমার সাথে মিথ্যা বলার চেষ্টা কর না কারন আজ পর্যন্ত তুমি আমার সাথে মিথ্যা বল নি তোমার বাবা-মা চলে যাওয়ার পর। আজো বল না।

রুহুল আজিজ চাচাকে সব কিছু খুলে বলল। তারপর-
আজিজ চাচাঃ বাবা রুহুল সত্যি কথা বল তো তুমি কি তাকে পছন্দ কর, ভালবাস?
রুহুলঃ চাচা জানি না। শুধু তাকে নিয়ে ভাবতে আমার ভাল লাগে। তাঁর চেহারা যেন বারে বারে আমার চোখে ভেসে উঠে।
আজিজ চাচাঃ তোমাকে একটা প্রশ্ন করি যদি আমি তোমাদের দুজনকে একত্র করে বলি একজনের প্রাণ আমার জন্য দিয়ে দিতে হবে তাহলে তুমি কারটা দিবে?
রুহুলঃ সে মারা যাক আমি তা চাই না তাই আমার প্রাণ দিয়ে দিব।
আজিজ চাচাঃ তাহলে কি হল তুমি তাকে তোমার নিজের প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসো।
রুহুলঃ হা তাহলে।
আজিজ চাচাঃ তাহলে তুমি তাকে ভালবাস।
রুহুলঃ বাবা-মা মারা যাওয়ার পর কখনও এমন হই নি তবে আজ কেন?
আজিজ চাচাঃ প্রত্যেক মানুষ জীবনে একবার না একবার প্রেমে পরে হইত তুমি ও তাই...।
রুহুলঃ না আজিজ চাচা এমন হবে না।
আজিজ চাচাঃ যাহুক তা পরে বোঝা যাবে। এখন গোসল কর। 
অতঃপর রুহুল গোসল করে REMEMBER ME মুভি দেখল। খুব ভাল লাগল মুভিটা দেখে রুহুলের। অতঃপর রুহুল তাঁর কম্পিউটার এ তাঁর তুলা ছবি গুলো রাখতে থাকল। হঠাৎ দেখে নিঝুম এর একটা ছবি লাল টুপি এবং ওড়না পড়া। তৎক্ষণাৎ রুহুলের মনে পরল যে নিঝুম এর একটি ছবি তুলেছিল। রুহুল ছবিটির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। হঠাৎ আজিজ চাচার ডাক দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য। দুপুরের খাবার শেষ করে আবার সেই ছবি দেখা শুরু। ঠিক তখনি-
আজিজ চাচাঃ রুহুল এই সেই মেয়ে নাকি?
রুহুলঃ (আতকে উঠে বলল) জি চাচা।
আজিজ চাচাঃ বাহ আমার মা টা তো খুব সুন্দর।
রুহুলঃ চাচা তোমার আবার মা হল কিভাবে?
আজিজ চাচাঃ বা রে তোমার বউ হলে আমার মা ই তো হবে।
রুহুলঃ যাও চাচা বাজে বক না।
এই বলে রুহুল কম্পিউটার বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরল। ঘুম থেকে উঠে দেখে রাত ৭ টা বাজে। সাথে সাথে মোবাইল নিয়ে দেখে নিঝুম এর কল এসেছে কিনা কিন্তু আসে নি। রুহুল চিন্তায় পরে গেল। তারপর রাত ১০টায় নিঝুম এর মোবাইল এ কল করল কিন্তু মোবাইল বন্ধ। রুহুল আবারো অস্থির হয়ে উঠল। সারা রাত মোবাইল এ কল করল কিন্তু বন্ধ। পরে ভোর বেলা ঘুমিয়ে পরল রুহুল। ঘুম থেকে উঠে দেখে ১১:৩০ বাজে। হঠাৎ রুহুলের মনে হল যে কলেজে  তপু তাঁর জন্য অপেক্ষা করবে। রুহুল তপুকে কল করল। 
রুহুলঃ হ্যালো।
তপুঃ হা রুহুল বল।
রুহুলঃ তুই কোথায়?
তপুঃ সরি দোস্ত আমি কলেজে আসতে পারছি না আমার নানু মারা গেছে।
রুহুলঃ ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহে রাজিউন। তপু তুই কাঁদিস না দোস্ত মানুষ তো আর চির কাল বেঁচে থাকে না। আমি আসছি তোর নানুর বাড়ি।
তপুঃ আচ্ছা আই।
রুহুল সব ফ্রেন্ড দের সাথে নিয়ে তপুর নানুর বাড়ির উদ্দেশে রউনা হল। কিন্তু দুঃখের বিষয় রুহুল মোবাইল আনে নি সাথে করে ভুলে ফেলে রেখে এসেছে বাসায়। রুহুল তা নিয়ে টেনশন শুরু করল। পরে মনে করল যা হবার হবে আগে তপুর নানুর দাফন-কাফন সম্পন্ন করি। দুপুর ৩টা বাজল তপুর নানুর দাফন-কাফন ও জানাযা শেষ। তারপর তপু ভেঙ্গে পড়েছে বিধায় তাকে সান্তনা দিতে দিতে রাত ৮টার দিকে রুহুল বাড়ি গেল। বাড়ি ফিরে প্রথমে মোবাইল এ হাত কিন্তু নিঝুম কল করে নি। রুহুল দুশ্চিন্তা করছে কি হল। এই রাতেও সে ফোন পেল না নিঝুম এর কিন্তু মোবাইল ও বন্ধ। সকাল ১০টায় নিঝুম এর ফোন।
নিঝুমঃ রুহুল কেমন আছ?
রুহুলঃ কেমন আছি বোঝতে পারছ না?
নিঝুমঃ সরি আমার মোবাইল চোরে নিয়ে গিয়েছিল তাই কল দিতে পারি নি।
রুহুলঃ আমি টেনশন করতে করতে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।
নিঝুমঃ দূর বোকা। আচ্ছা রুহুল একটা কথা বলি?
রুহুলঃ হা বল।
নিঝুমঃ তুমি আমার জন্য এত টেনশন কর কেন? আমি তোমার কি?
রুহুলঃ জানি না। শুধু জানি তোমার খুঁজ খবর না পেলে আমি পাগলের মত হয়ে যায়।
নিঝুমঃ আমি বাসায় এসেছি। তোমার দেয়া গিফট গুলো বাবাও অনেক পছন্দ করেছে।
রুহুলঃ ও তাই। আংকেল কে আমার সালাম দিও।
নিঝুমঃ আমি বলি নি তুমি দিয়েছ তাই তোমার সালাম ও আমি পৌছাতে পারব না।
রুহুলঃ ও আচ্ছা তাহলে থাক। আগামীকাল তো বাংলা নববর্ষ তো কি করবে?
নিঝুমঃ কাল শাড়ি পরে কলেজে যাব। বান্ধবীদের সাথে আড্ডা মেরে খাওয়া-দাওয়া শেষে আবার বাসায় চলে আসব। জাস্ট এইটুকু ই। তুমি কি করবে?
রুহুলঃ আমি কিছু করব না কাল ফেনী সরকারি কলেজে যাব।
নিঝুমঃ কেন? আমাদের কলেজে কেন?
রুহুলঃ নিঝুমের সাথে দেখা করতে।
নিঝুমঃ পাগল নাকি তুমি?
রুহুলঃ না আমি পাগল না বাংলা নববর্ষ তোমার সাথে কাটাব বলে আমি আগামীকাল আসব সাথে তপুও আসবে।
নিঝুমঃ আচ্ছা তুমি কি সত্যি ই আসবে নাকি?
রুহুলঃ হা আসব নইত কি আমি শুধু শুধু বলছি।
নিঝুমঃ কয়টা বাজে আসবে?
রুহুলঃ ১১ টার দিকে।
নিঝুমঃ আচ্ছা আমি কলেজে থাকব এসে কল দিও।
রুহুলঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
নিঝুমঃ তাহলে পরে কথা হবে এখন রাখি। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও।
রুহুলঃ আচ্ছা ঠিক আছে আল্লাহ্‌ হাফেয। 
পরের দিন রুহুল তপুকে নিয়ে রউনা দিল। ফেনী সরকারি কলেজের দিকে। বাসে যেতে হল তাদের কারন এত সকাল বেলা কোন ট্রেন নাই কুমিল্লা থেকে। যাহুক অনেক চরায়-উৎরায় পার হয়ে তপু ও রুহুল ফেনী সরকারি কলেজে পৌঁছল।
তপুঃ নিঝুমকে কল কর তা না হলে এত মানুষের ভিড়ে কেমন করে খুঁজে পাবি?
রুহুলঃ আমি ঠিক খুঁজে পাব।
তপুঃ আরে শ্যালা এত কষ্ট করে আসলাম এখন আবার খুঁজে বের করব!!!
রুহুলঃ আমি নিঝুমকে সারপ্রাইস দিতে চাই তাই কল না দিয়ে তাঁর সামনে যাব।
তপুঃ শ্যালা দেখতে পাচ্ছিস না সবাই প্রায় একি ধরনের কাপড় পরা কিভাবে খুঁজে পাবি।
রুহুলঃ তুই চুপ করে আমার সাথে চল আমি বের করি।
এই বলে তাঁরা দুইজন খুঁজা শুরু করল। হঠাৎ রুহুল দেখে দু তলার বারান্দায় নিঝুম ও তাঁর সাথে জাফলং সফরের দুই বান্ধবী দাঁড়িয়ে আছে। অতঃপর তপু ও রুহুল নিঝুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। নিঝুম রীতিমত অবাক হয়ে গেল। তারপর-
নিঝুমঃ কল না করে আমার সামনে আমি অবাক। কিভাবে চিনলে?
রুহুলঃ আমার চোখে যাকে একবার দেখি তাঁর চেহারা ভাল ভাবে মনে থাকে।
নিঝুমঃ তাই নাকি!!! তপুকে দেখে ক্লান্ত মনে হচ্ছে।
রুহুলঃ হা অনেক কষ্ট করে এখানে পৌছা এবং তাঁরপরে তোমাকে খুঁজা তাই ক্লান্ত হয়ে পরল তপু।
নিঝুমঃ তাহলে তুমি ও তো মনে হয় ক্লান্ত।
রুহুলঃ না আমি তো এইটা কে একটা মিশন স্বরূপ নিয়েছিলাম তাই সফল হয়ে আরও ভাল লাগছে।
শিলাঃ তোরা কি দাঁড়িয়ে ই কথা বলবি নাকি একটু বসবি?
রুহুলঃ হা চল কোথাও বসা যাক।
শিলাঃ বটতলায় যাওয়া যাক সেখানে বসে কথা বললে প্রাকৃতিক বাতাস এবং শান্তি দুটো ই পাওয়া যাবে।
তপুঃ চলুন তাহলে সেখানে ই যাওয়া যাক। আমার খুব গরম লাগছে। 
তারপর সবাই বটতলায় গিয়ে বসল। সবাই অনেক মজা করছে সাথে তপুও। তারপর তপু চা খাওয়ার কথা বলল এবং নিঝুমের দুই বান্ধবীকে নিয়ে তপু চা খেতে গেল। অতঃপর-
নিঝুমঃ তারপর খবর কি বল?
রুহুলঃ কিছু না।
নিঝুমঃ হঠাৎ এই ঝটিকা অভিযান কেন?
রুহুলঃ ভাবলাম তোমার সাথে বাংলা নববর্ষ কাটাব তাই। তোমাকে বাঙালি সাজে তো খুব সুন্দর লাগছে।
নিঝুমঃ ধন্যবাদ। কবি মানুষের কাছে সব ই সুন্দর লাগে।
রুহুলঃ ভুল যা সুন্দর তা ই কবি মানুষের কাছে সুন্দর লাগে।
তারপরে তপু ও নিঝুমের দুই বান্ধবী চা খেয়ে এসে পরল। পরে সবাই সবার সঙ্গে ছবি তুলছে। রুহুল ও নিঝুমের সাথে কিছু ছবি তুলেছে। প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা পর সবাই এক সাথে দুপুরের খাবার খেয়ে তপু ও রুহুল চলে যাওয়ার কথা বলল। পরে নিঝুম ও তাঁর বান্ধবীরা তাদেরকে এগিয়ে দিয়ে গেল। রাতে রুহুল বাসায় এসে ছবি গুলো দেখে নিঝুমের জন্য আরও পাগল হয়ে গেল। রুহুলের ভাল লাগা এবং ভাল বাসা যেন সীমানা অতিক্রম করছে। তারপর প্রতিদিন রাতে ই নিঝুমের সাথে রুহুলের কথা হয়। 
এইভাবে রুহুল এক সপ্তাহ কথা বলার পর রুহুলের মনে হল রুহুল আসলে ঐ মেয়েটির প্রেমে পরে গেছে। এক সপ্তাহ পর রুহুল তাঁর জীবনের অনেক পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছে। তপুকে ফোন দিল-
তপুঃ রুহুল তুই কোথায়?
রুহুলঃ আমি বাসায়। তুই কোথায়?
তপুঃ আমি প্রিয়ার সাথে কলেজে।
রুহুলঃ তুই থাক প্রিয়াকে ও থাকতে বলিস আমি আসছি। 
এই বলে রুহুল কলেজের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করল। কলেজে পৌঁছার পর কলেজ ক্যান্টিন এ তপু, প্রিয়া ও রুহুল বসল।
তপুঃ কিরে দোস্ত এত জরুরী আগমন কেন?
রুহুলঃ আমি এমনি এক সমস্যায় পরেছি না পারছি কিছু বলতে না পারছি কিছু সইতে।
প্রিয়াঃ কি প্রেমে পরেছ নাকি?
তপুঃ আরে না কাকে কি বলছ সে পড়বে প্রেমে?
রুহুলঃ নারে দোস্ত এমনি একটি ঘঠনা।
তপুঃ তাহলে কি তুই প্রেমে পরলি?
রুহুলঃ আমার তো তাই মনে হচ্ছে।
তপুঃ কার?
রুহুলঃ নিঝুম এর।
তপুঃ কোন নিঝুম সেই নিঝুম নাকি?
রুহুলঃ হা দোস্ত।
তপুঃ তুই বলেছিস যে তুই ওকে ভালবাসিস?
রুহুলঃ না বলি নি।
তপুঃ কেন বলিস নি?
রুহুলঃ সে যদি কিছু মনে করে আমায় ছেড়ে চলে যায়। তাহলে আমি মারা যাব।
তপুঃ আরে তুই তো দেখি প্রেমে পাগল হয়ে গেছিস।
রুহুলঃ হা রে দোস্ত এমন ই। এখন কি করতে পারি বল। এজন্যই তোর কাছে আসা।
তপুঃ তুই যদি না বলিস যে তুই ওকে ভালবাসিস তাহলে তাঁর মনের কথা কিভাবে জানবি?
রুহুলঃ তা ঠিক কিন্তু সে যদি আমাকে ছেড়ে চলে যায়?
তপুঃ তোর প্রেম কিন্তু এক দিনে তৈরি হয় নি অনেক দিন তাঁর সাথে কথা বলার পর সৃষ্টি হয়েছে। তাই তাঁর মনেও হইত এমন কিছু আছে যা তোকে বলার জন্য। তুই না বললে তা বোঝবি কেমন করে?
রুহুলঃ তা ঠিক। এখন তুই কি বলিস যে তাকে আমি আমার ভালবাসার কথা বলি?
তপুঃ হুম তাই কর।
প্রিয়াঃ রুহুল তুমি বলে ফেল তারাতারি আর আমরা ও একটা পার্টি থ্রোও করি।
রুহুলঃ সফল হলে পার্টি দিব।
তপুঃ তুই নিঝুমকে বল কুমিল্লাতে আসতে।
রুহুলঃ ও কিভাবে মেয়ে মানুষ হয়ে এত দূর আসবে?
তপুঃ আরে বলে ই দেখ না।
রুহুলঃ আচ্ছা ঠিক আছে এই বলে রুহুল চলে গেল। 
রাতে রুহুল ফোন দিল নিঝুমকে।
রুহুলঃ নিঝুম তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
নিঝুমঃ বল।
রুহুলঃ না ফোন এ বলা যাবে না সরাসরি বলতে হবে।
নিঝুমঃ সরাসরি কিভাবে বলবে আমি তো এক জেলায় তুমি এক জেলায়।
রুহুলঃ যদি তুমি কুমিল্লায় আসতে?
নিঝুমঃ পাগল নাকি এখন আমাকে বাবা অন্য কোথাও যেতে দিবে না।
রুহুলঃ প্লিজ দেখ না আসতে পার কি না।
নিঝুমঃ আচ্ছা দেখি আমার কাকার বাসা কুমিল্লা। বাবাকে বলে দেখি দেয় কিনা। আমি তোমাকে জানাব।
রুহুলঃ আচ্ছা আমাকে আগামীকাল সকালে জানিয়ো। ভাল থেক।
নিঝুমঃ আল্লাহ্‌ হাফেয। 
সকালে রুহুলকে ফোন দিল নিঝুম।
রুহুলঃ হ্যালো।
নিঝুমঃ এখনও ঘুম থেকে উঠ নি?
রুহুলঃ না। বল।
নিঝুমঃ বাবা একদিনের জন্য যেতে বলেছে মানে আমি আগামীকাল শুক্রবার সকালে আসব শনিবার চলে আসব।
রুহুলঃ আচ্ছা ঠিক আছে আসো। আর আমার ডায়েরীটা নিয়ে এসো।
নিঝুমঃ আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে আসব।
এই বলে ফোন রেখে রুহুল খুশিতে লাফাতে শুরু করল আনন্দে। আজিজ চাচা তা দেখে খুশি হল কারন রুহুলকে কোন সময় চাচা এইভাবে লাফাতে দেখে নি বাবা-মা মারা যাবার পর। তারপর- 
আজিজ চাচাঃ কি আমার কথা ই সত্যি হল নাকি?
রুহুলঃ জি কাকা I am in Love
রুহুল তপুকে ফোন করে বলল আগামীকাল আসবে। তারপর তপু ও রুহুল মিলে ঠিক করল রুহুলের বাসায় বসে তাঁরা কথা বলবে।
শুক্রবার তপু ও রুহুল নিঝুমকে ষ্টেশন থেকে আনতে গেল। ট্রেন ঠিক সময় মত এসেছে। নিঝুম ট্রেন থেকে নামল এবং তপুর সাথে কুশলবিনিময় হল। তাঁরা স্টেশন থেকে রউনা দিয়ে গেল রুহুলের বাসায়।
নিঝুমঃ এটা কার বাসা?
রুহুলঃ আমার।
নিঝুমঃ খুব সুন্দর। বাগানটা ও অনেক সুন্দর মনে হচ্ছে এইগুলোকে নিয়ে ই যেন তোমার কাব্য-কবিতা সব। তাই তো বলি এত কাব্যিক ভাষা কিভাবে মনে আসে।
নিঝুমঃ চল ভিতরে।
রুহুলঃ এটা আমার আজিজ চাচা বাবা-মা মারা যাবার পর আমার উনি ছাড়া আর কেউ নেই।
নিঝুমঃ চাচা কেমন আছেন?
আজিজ চাচাঃ ভাল মা ভিতরে গিয়ে বস 
রুহুল নিঝুমকে রুহুলের রুমে নিয়ে বসাল।
নিঝুমঃ রুহুল তোমার রুম তো খুব সুন্দর। আরে আমার ছবি এখানে কেন?
রুহুলঃ ছবিটা সুন্দর হয়েছে তাই রাখলাম।
নিঝুমঃ তুমি গিটার বাজাতে পার নাকি?
রুহুলঃ হা একটু একটু।
নিঝুমঃ তাহলে একটু বাজিয়ে শুনাও। 
রুহুল একটি গান ধরল। আমার স্বপ্ন গুলো কেন এমন স্বপ্ন...গান শেষ হওয়ার পর আজিজ চাচা নাস্তা এনে দিল রুহুল, তপু, এবং নিঝুমকে। তপু নাস্তা খেয়ে তাদেরকে রেখে বলল তোরা কথা বল আমি টিভি দেখি ড্রইং রুমে।
নিঝুমঃ তাহলে বল কেন এত জরুরী তলব?
রুহুলঃ কিছু না এমনি।
নিঝুমঃ এত দূর থেকে কত কষ্ট করে আসলাম আর তুমি বলছ কিছু না এমনি। তুমি কি আমাকে এপ্রিল ফুল করতে এনেছ নাকি।
রুহুলঃ না তানা। এপ্রিল ফুল কেন করব। এপ্রিল মাস দেখে তাই না এমন কিছুই না।
নিঝুমঃ তাহলে কি। আচ্ছা যাহুক তুমি তোমার বাসা আমাকে দেখাতে এনেছ এবার আমাকে কাকার বাসায় যেতে হবে কাল আমি সেখান থেকে চলে যাব কাকাকে সঙ্গে নিয়ে। 
এই বলে নিঝুম উঠে দরজার দিকে যাচ্ছিল তখন রুহুল নিঝুম এর এক হাত ধরে রেখে বলে I Love You… তখন নিঝুম পিছন ফিরে চোখ লজ্জায় নিচু করে ফেলে এবং বসে পরে।
রুহুলঃ হাতটি ছেড়ে সত্যি আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি আমার জীবনের চেয়ে বেশি। নিঝুম তুমি কিছু বল।
নিঝুম কিছু বলল না।
রুহুলঃ নিঝুম তুমি কিছু না বললে যে আমি আমার উত্তর পাব না। আচ্ছা কিছু বলতে হবে না যদি তুমি আমার ডান হাতের ওপর তোমার হাত রাখতে পার তাহলে আমি মনে করব তুমি আমাকে ভালবাস। 
এই কথা বলাতে নিঝুম তাঁর হাত নাড়াচ্ছে এবং ভীষণ কাপছে তাঁর হাত। কোন ভাবে ই নিঝুম যেন তাঁর হাত উঠাতে পারছে না। হঠাৎ জোর করে নিঝুম হাত রাখল। অতঃপর-
রুহুলঃ তুমি কি আমার হবে?
নিঝুমঃ জানি না।
তারপর নিঝুম কাঁদতে শুরু করল অঝোর ধারায়। 
রুহুলঃ কি হল?
নিঝুমঃ তুমি এত দিন বল নি কেন যে তুমি আমাকে ভালবাস। আমি তো সেই কথাটি শুনার অধীর আগ্রহে ছিলাম।
এই বলে নিঝুম রুহুলকে ঝরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে।
রুহুলঃ কাঁদছ কেন?
নিঝুমঃ এত দেরি করলে কেন। আমি তো তোমার জন্য ই সেই সাদা-নীল জামা পরে তোমার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তুমি তখনও বোঝ নি কেন। তুমি একবারও বোঝ নি আমার ভালবাসার কথা। তোমায় ভালবাসি বলে ই আমি তোমার ডায়েরী আজও আনি নি। কারন তুমি যদি আমাকে তোমার ভালবাসার কথা না বলতে তাহলে আমি এই ডায়েরী ও না পাওয়া ভালবাসা নিয়ে মারা যেতাম।
তখন রুহুলকে ঝরিয়ে ধরা থেকে ছাড়ল নিঝুম। 
রুহুলঃ আমি বোঝি নি তুমি আমাকে ভালবাস। আজ বোঝেছি। যদি তুমি এই পৃথিবীতে না থাক তাহলে আমার থেকে লাভ কি। আমি আমার জীবনের চেয়ে বেশি তোমাকে ভালবাসি। আমার এই পৃথিবীতে কেউ নাই শুধু তুমি আছ।
নিঝুমঃ রুহুল আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাকে কাকার বাসায় যেতে হবে।
রুহুলঃ আচ্ছা চল তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
এই মুহূর্তে তপু হাজির।
তপুঃ কিরে তোদের কথা শেষ হল।
রুহুলঃ হা শেষ হল এখন নিঝুমকে পৌঁছে দিতে হবে তাঁর কাকার বাসায়। চল। 
সবাই এক সাথে বের হয়ে গেল এবং নিঝুমকে তাঁর কাকার বাসায় পৌঁছে দিয়ে তপুকে বিস্তারিত সব বলে রুহুল বাসায় চলে আসে। এসে আজিজ চাচাকে সব বলে।
আজিজ চাচাঃ তাহলে আমি তোমাদের কথা নিঝুম এর বাবার কাছে গিয়ে বলব। অবশ্যই তিনি তা মেনে নিবেন। কারন তোমার তো অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল তোমাদের সব কিছু আছে দিতে তিনি আপত্তি করবেন কেন?
রুহুলঃ চাচা আমি বাড়ির ঠিকানা জানি না। বাড়ির ঠিকানা টা আগে জানি তারপরে না হয় তোমাকে পাঠাবো।
আজিজ চাচাঃ ঠিক আছে। 
কিছুক্ষণ পর নিঝুম ফোন করে জানাল সে কাকার বাসাতে ভালভাবে পৌছেছে।
নিঝুমঃ রুহুল, আমি কাল যাচ্ছি না কাকা বাবাকে বলেছে আমি পরশু যাওয়ার জন্য। আর এখন আমার উত্তর তো পেলে কেমন লাগছে?
রুহুলঃ খুব ভাল। আমি কল্পনা ই করি নি যে তুমি আমাকে ভালোবাসো যাহুক নিঝুম তোমাদের বাড়ির ঠিকানা টা যেন কি? একটু বলবে।
নিঝুমঃ কেন বাড়ির ঠিকানা দিয়ে কি করবে?
রুহুলঃ আরে আগে দাও তারপর বলছি।
নিঝুমঃ ফেনী, ডাক্তারপাড়া...এখন বল ঠিকানা কেন নিলে?
রুহুলঃ কারন এখন থেকে তোমাকে ফোন এ না পেলে এই ঠিকানাতে চিঠি লিখব।
নিঝুমঃ এই সাবধান এই কাজ কর না তাহলে বাবার হাতে মার খেতে হবে আমাকে।
রুহুলঃ আচ্ছা ঠিক আছে করব না। 
রুহুল ঠিকানা নিয়ে তপুকে দিয়ে বলে একটু খবর নিতে নিঝুম সম্পর্কে। তপুও রুহুলের কথা মত ঠিকানা নিয়ে নিঝুম এর বাড়ির অবস্থা এবং তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানল। তারপর তপু রুহুল এর সঙ্গে দেখা করল।
তপুঃ নিঝুম এর বাড়ির খবর নিলাম। তাঁর বাবা মোতাহার আহমেদ একজন কৃষক। গ্রামে তাদের তেমন কিছু নেই শুধু জমি-জামা থেকে চাষ করে যা পাওয়া যায় তা ই। তা ছাড়া নিঝুম এর পড়ালেখার খরচ চালাতে গিয়ে তাঁর বাবাকে অনেক সময় হিমশিম খেতে হয়। তাঁর বাবা খুব পরহেজগার মানুষ।
রুহুলঃ আরে এগুলো তো আমার দরকার নেই। মেয়ের বিয়ে সম্পর্কে বাবার কি কোন তাড়াহুড়া আছে নাকি সেই সম্পর্কে কিছু জেনেছিস?
তপুঃ হা ভাল কথা গ্রাম দেশ মেয়েকে তো আগে ই বিয়ে দেয়ার কথা কিন্তু গ্রামের লোকমুখে শুনলাম তিনি নাকি মেয়ের বিয়ে নিয়ে কেউ গেলে তাকে না করে দেন। এমনকি মেয়েকে ও দেখান না। আর আরেকটি কথা নিঝুম এর মা নিঝুম জন্ম নেয়ার সময় ই মারা যায়। কিন্তু নিঝুম এর বাবা বিয়ে করেন নাই কারন তাঁর স্ত্রীকে তিনি অনেক ভালবাসতেন গ্রামের লোকদের মুখের কথা এগুলো।
রুহুলঃ তাহলে তো উনার সামনে যাওয়ায় মুশকিল উনার মেয়ের ব্যাপারে।
তপুঃ আমি নিঝুম এর বাবার সাথে কথা বলেছি তিনি আমার পরিচিত একজন যখন আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে তাবলীগে গিয়েছিলাম তখন তিনি আমাদের গ্রুপে ছিলেন। সেই ভাবে তাঁর সাথে কথা। আর তোদের কথা কিছুটা জানে নিঝুমের বাবা। তুই যেদিন কলেজে গিয়েছিলি ঐ দিন নিঝুমের বাবা কেমন করে জানি খুঁজ পেয়েছে। আমি তাঁর মুখ থেকে বিস্তারিত অনেক কিছু জেনে এসেছি। তিনি তাঁর মেয়েকে বিয়ে দিতে চান না এর মধ্যে অনেক কষ্ট আছে। রুহুল তুই শুনে দুঃখ পাবি আমি বলতে পারব না।
রুহুলঃ তপু কি হয়েছে বল!! ওদের যত সমস্যা ই থাকুক আমি নিঝুমকে গ্রহন করতে রাজি।
তপুঃ ওদের সমস্যা না সমস্যা টি একমাত্র নিঝুম এর।
রুহুলঃ ওর কিছু হলে আমি বাঁচব না কি হয়েছে ওর বল।
তপুঃ এমন করে বলিস না তাহলে তোকে যে আমাদের হারাতে হবে। নিঝুম এর ব্রেইন ক্যান্সার যার জন্য তাঁর বাবা তাকে বিয়ে দিয়ে কোন ছেলেকে অকালে মরতে দিতে চাই না। ছোট বেলায় নিঝুম এর অনেক মাথা ব্যাথা হত তখন ঢাকা মেডিকাল এ তাঁর বাবা তাঁর ডাক্তার দেখায়। বিভিন্ন পরীক্ষার ফলে নিঝুম এর ব্রেইন ক্যান্সার ধরা পড়ে। ডাক্তার বলেছিল যে বিদেশ ছাড়া তাঁর অপারেশন করা যাবে না। কারন দেশে অপারেশন করালে সে মারা যেতে পারে। আর বিদেশে অপারেশন করার জন্য অনেক টাকার দরকার যা নিঝুম এর বাবার নেই।
রুহুলঃ আমি বিশ্বাস করি না। এত সুন্দর সুস্থ মেয়েটির ব্রেইন ক্যান্সার। এটা কেমন করে সম্ভব রে তপু। আমার জীবনটা এমন কেন রে তপু। (কাঁদতে কাঁদতে রুহুল)
তপুঃ এটি ই বাস্তব যে নিঝুম এর ব্রেইন ক্যান্সার। দোস্ত কাঁদিস না।
রুহুলঃ আমি নিঝুমকে ভাল করে তুলতে চাই। যত টাকা লাগে আমি দেব কিন্তু নিঝুমকে আমি সুস্থ দেখতে চাই। তুই একটু নিঝুম এর বাবার সাথে কথা বলে দেখ।
তপুঃ আচ্ছা দেখি কি করা যায়। যদি পারি আমি আবার তাদের বাড়িতে যাব। সাবধান নিঝুম তাঁর অসুস্থের কথা জানে না তাকে বলতে যাস নে। তুই বাসায় যা।
তারপরে রুহুল তাঁর আজিজ চাচাকে সব কিছু খুলে বললে আজিজ চাচা তাকে সান্তনা দিল। সেই দিন থেকে রুহুল সিগারেট ও মদ খাওয়া শুরু করে। তাঁর চাচা তাকে বারণ করা সত্তেও সে কিছুতে এসব ছাড়ে নি। নিঝুম তাঁর কাকার বাসা থেকে নিজের বাড়িতে গিয়েছে। নিঝুম ফোন দেয় রুহুলকে, রুহুল কথা বলে যায় কিন্তু নিঝুমকে কিছু বোঝতে দেয় না। তপু রুহুলকে কল দেয়। 
তপুঃ রুহুল, নিঝুম এর বাবার সাথে কথা হয়েছে আমি তাকে বললাম টাকার ব্যবস্থা আমি করে দিব আপনি তাকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। নিঝুম এর বাবা রাজি হল না। তারপর আমি বিস্তারিত তোদের কথা বলার পর তিনি বলেছেন আমি কিভাবে তাঁর কাছে এইসব চাই যে আমার মেয়েকে ভালবাসে। ভালবাসার মূল্য আমি টাকা দিয়ে করতে পারব না। তখন আমি বললাম সে তাঁর জীবনের চেয়ে বেশি আপনার মেয়েকে ভালবাসে তাই সে নিঝুমকে চিকিৎসা করাতে বিদেশ নিয়ে যেতে চাই। অনেক বলে কয়ে নিঝুম এর বাবাকে রাজি করালাম। তিনি বললেন নিঝুম যাতে তারাতারি এই বিষয়টি না জানে শুধু যাওয়ার সময় জানবে।
রুহুলঃ আচ্ছা ঠিক আছে আমি খবর নিচ্ছি। কিভাবে কি করা যায়।
রুহুল খবর নিয়ে দেখল প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা দরকার এই চিকিৎসার জন্য। তাকে এক মাস চিকিৎসা নিতে হবে। তবু নিশ্চিত না যে নিঝুম বাঁচবে কিনা!! কিন্তু রুহুলকে তো তাঁর চেষ্টা করতে ই হবে কারন নিঝুম রুহুলের জীবন। নিঝুমকে ছাড়া যে রুহুল বাঁচতে পারবে না । রুহুল ঠিক করল তাঁর নিজের থাকার বাড়িটুকু বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিল। রুহুল এইটা বোঝার জন্য আজিজ চাচার সাথে কথা বলার জন্য গেল।
রুহুলঃ চাচা, নিঝুম এর চিকিৎসার জন্য ৭০-৮০ লক্ষ টাকা দরকার তাই আমি ভাবছি এই বাড়িটুকু বিক্রি করে দিব।
আজিজ চাচাঃ বাবা তোমার বাবা-মায়ের একমাত্র স্মৃতি এই বাড়িটি যদি তা বিক্রি করে দাও তাহলে তোমার বাবা-মাকে আর স্মৃতিতে খুঁজে পাবে না। তাছাড়া তুমি থাকবে কোথায়?
রুহুলঃ চাচা আমি যেকোনো জায়গাতে থাকতে পারব তা ছাড়া আমি যে তাকে ভালবাসি তাই আমার সব কিছু দিয়ে তাঁর জীবন বাঁচাতে হবে।
আজিজ চাচাঃ দেখ তুমি যা ভাল মনে কর তাই কর কিন্তু এই বাড়ি বিক্রির টাকা ই যথেষ্ট হবে না আরও লাগবে ঐ গুলো কোথা থেকে জোগাড় করবে?
রুহুলঃ যেভাবে হোক আমি করব তা নিয়ে তুমি চিন্তা কর না। 
এই বলে রুহুল বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরল। এবং নিঝুম এর বিদেশ যাওয়ার সব কিছু তৈরি করতে থাকে। আর এদিকে নিঝুম এর বাবা তাকে তাঁর অসুস্থতার কথা তাকে বলে এবং কিভাবে কি হবে সব কিছু বলে। কিন্তু নিঝুম অপারগতা প্রকাশ করলে ও বাবার আকুতি মিনতি তে নিঝুম তা মেনে নেয়। নিঝুম এর বাবা নিঝুমকে ছাড়া বাঁচবে না এই কথা বলে রাজি করায়। যাহুক অবশেষে টাকা থেকে শুরু করে সব কিছু জোগাড় করে নিঝুম এর সাথে দেখা করতে যায় রুহুল।
নিঝুমঃ রুহুল তোমার একি অবস্থা। (কেঁদে কেঁদে নিঝুম)
রুহুলঃ তা কিছু নই তুমি সুস্থ হয়ে ফিরে দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে। শুধু বলব ভুলনা আমায়।
নিঝুমঃ আমি তোমাকে কিভাবে ভুলে যাব তুমি যে আমাকে নতুন করে জীবন দিচ্ছ।
রুহুলঃ তুমি আমার জন্য দুয়া কর।
নিঝুমঃ তুমি ছাড়া যে আমার সব কিছুই অপূর্ণ তুমি কি তা এখনও বোঝ নি। তোমাকে ছাড়া যে আমার এই জীবন স্থির তা কি তুমি বোঝ না। তুমি আমার সুস্থতার জন্য দুয়া কর।
রুহুলঃ তুমি অবশ্যই সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে। যার জন্য আমি তোমাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাচ্ছি।
এই বলে রুহুল নিঝুমকে ঝরিয়ে ধরল। এবং বলতে লাগল নিঝুম তুমি আমার অস্তিত্ব তুমি ছাড়া আমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে তুমি ছাড়া আমার বেঁচে থেকে কি হবে। রুহুল নিঝুমকে সান্তনা দিয়ে নিঝুমকে জানিয়ে দিল তাঁর বিদেশ যাওয়ার ফ্লাইট রবিবার মানে আগামী পরশু দিন রাত ১০টায়। তাই নিঝুমকে কাল বিমানবন্দরে যেতে হবে। বলে রুহুল বাসায় চলে যায়। 
রবিবার রাতে নিঝুমকে নিয়ে রুহুল বিমানবন্দরে গেল। নিঝুম এর সাথে যাচ্ছে তাঁর বাবা এবং আজিজ চাচার ছেলে (কিছু দিন হল আজিজ চাচার ছেলে বিদেশ থেকে ছুটিতে এসেছিল)। নিঝুম বিমানবন্দরে ঠিক ই কিন্তু রুহুল নিঝুম এর হাতে কি যেন লক্ষ করল।
রুহুলঃ নিঝুম হাতে কি?
নিঝুমঃ তোমার সেই ডায়েরী যদি আর ফিরে না আসি তাহলে অন্তত একবার হলে ও তোমার ডায়েরীটা পরতে পারব।
রুহুলঃ তুমি অবশ্যই ফিরে আসবে। আমি তোমার জন্য অনেক চিঠি লিখব যা তুমি এসে পরতে পারবে।
মাইকে ঘোষণা করল নিঝুম এর ফ্লাইট ১৫ মিনিট পর ছেড়ে যাবে। নিঝুম বিমানবন্দরের ভিতরের দিকে এগুচ্ছে। সবার থেকে বিদায় নিচ্ছে কিন্তু কিছুতে রুহুলের হাত ছাড়তে চাচ্ছে না।
রুহুলঃ নিঝুম তুমি থাকবে আমার প্রতিটি রক্ত বিন্দুতে। তুমি অবশ্যই আবার আমার কাছে ফিরে আসবে। আমি তোমাকে নিতে আসব আবার।
নিঝুমঃ আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব কিনা বিদেশে জানি না।
রুহুলঃ তোমাকে যে থাকতে ই হবে। তোমার চিকিৎসার জন্য। আমার জন্য তোমাকে বেঁচে আসতে হবে। 
নিঝুম ইমিগ্রেশন এর ভিতর ডুকছে এমন সময় দৌড়ে এসে রুহুলকে ঝরিয়ে ধরে বলছে রুহুল তুমি আমাকে বিদায় দাও। রুহুল বলল, বিদায় আবার দেখা হবে। তারপরে নিঝুম এর ফ্লাইট চলে গেল। ৮ ঘন্টা পর রুহুলের কাছে ফোন এল নিঝুম পৌঁছে গেছে। নিঝুমও রুহুলের সাথে কথা বলেছে। আর এইদিকে রুহুলকে বাড়ি ছেড়ে আজিজ চাচার সাথে একটি ছোট ঘর ভাড়া করে নিল যার ভাড়া আজিজ চাচার ছেলে দিবে। রুহুলের শরীরের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। আজিজ চাচা কিছুই বোঝতে পারছে না এমনকি তাঁর বন্ধুরাও কিছু বলতে পারছে না।
আজিজ চাচাঃ রুহুল তোমার শরীর তো অনেক খারাপ।
রুহুলঃ চাচা কিছু হবে না।
তপুঃ তোর শরীর এমন হল কিভাবে উঠে দাঁড়াতে ও পারছিস না?
রুহুলঃ ও এমন কিছু না ঠিক হয়ে যাবে।
ধিরে ধিরে রুহুল সুস্থ হয়ে গেল। আর এইদিকে নিঝুম এর অপারেশন মাত্র ১ দিন বাকি। রুহুল মসজিদে মিলাদ পড়িয়েছে নিঝুম এর জন্য। নিঝুম কল দিল রুহুলের মোবাইল এ।
নিঝুমঃ রুহুল তুমি কেমন আছ?
রুহুলঃ ভাল আছি। তুমি কেমন আছ?
নিঝুমঃ আমি ভাল আছি আগামীকাল আমার অপারেশন তুমি দুয়া করো। আর ভাল থেক।
রুহুলঃ তুমি আবার আমার জন্য ফিরে আসবে আমারই কাছে। ফের দেখা হবে ভাল থেক। 
এই বলে রুহুল ফোন রেখে কাঁদতে থাকে। তখন তাঁর আজিজ চাচা তাকে সান্তনা দেয়। রুহুল তাঁর আজিজ চাচাকে বলে আমি যদি মারা যায় তাহলে আমাকে আমার মা-বাবার সাথে দাফন করো চাচা। কিন্তু তাঁর চাচা তাকে সান্তনা দিচ্ছে এবং বলছে তুমি সুস্থ আছ। আজিজ চাচা এসব কথা রুহুলের ফ্রেন্ড তপুকে বলে তখন তপু চাচাকে বলে-
তপুঃ আচ্ছা চাচা ওর কি হয়েছে এত ভেঙ্গে পরছে কেন দিন দিন? নিঝুম গেল আজ ১ মাস এর মধ্যে সে যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে।
আজিজ চাচাঃ কিছুই বলতে পারছি না। আর এইটুকু একটা ছেলে ৭০-৮০ লক্ষ টাকা জোগাড় করে নিঝুমকে চিকিৎসা করানো তাও আবার দেশের বাহিরে বিরাট ব্যাপার।
তপুঃ সত্যি চাচা সে কিভাবে এইসব টাকা এবং যাওয়া মেনেজ করল অবাক লাগে।
আজিজ চাচাঃ হা তোমার মা-বাবার কাছ থেকে ও তো ৩ লক্ষ টাকা নিয়েছে এগুলো কিভাবে সে শোধ করবে আমি কিছুই বোঝতে পারছি না।
তপুঃ না আমার মা-বাবা তো রুহুলকে কোন টাকা দেয় নি।
আজিজ চাচাঃ কি বল আমাকে তো বলল ও তোমার মা-বাবার কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা তোমার মারফত। তাহলে সে এই টাকা কিভাবে জোগাড় করল। সব কিছু করার পর ৩ লক্ষ টাকা কম ছিল পরে সেটা রুহুল জোগাড় করে।
তপুঃ চল চাচা ওকে জিজ্ঞেস করি ও কোথা থেকে এত টাকা আনল।
তপু ও আজিজ চাচা ঘরে ডোকার সময় দেখে রুহুল মাটিতে পড়ে আছে এবং তাঁর মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। হাতে একটা চিঠি। তারাতারি তাকে তপু ও আজিজ চাচা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সাথে সাথে ডাক্তার তাকে ওটি তে নিয়ে যায়। ২-৩ ঘণ্টা পর-
ডাক্তারঃ উনার অনেক সমস্যা শরীরে।
তপুঃ কি সমস্যা ডাক্তার?
ডাক্তারঃ উনার একটা কিডনী নেই এবং আরেকটি ২৪ ঘণ্টার ভিতরে বিকল হয়ে যাবে। যদি ২৪ ঘন্টার ভিতর কিডনী প্রতিস্থাপন করা না যায় তাহলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না তাছাড়া অতিরিক্ত সিগারেট খাওয়ার কারনে তাঁর ফুসফুসে ঘা দিয়েছে যা সামান্য ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে। আর অনবরত তাঁর ব্লেডিং হচ্ছে তাই কিডনী ও প্রতিস্থাপন সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। এই রুগী বাঁচা খুব কঠিন ব্যাপার।
আজিজ চাচাঃ তপু সে তাঁর কিডনী বিক্রি করে মনে হয় তোমার নাম দিয়ে টাকা নিঝুমকে দিয়েছে।
তপুঃ তাই হবে। যাহুক ডাক্তার আমি সব টাকা দিব আপনি তাকে বাঁচাবার চেষ্টা করুন।
ডাক্তারঃ আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বাকিটা আল্লাহ্‌ এর উপর। 
একজন নার্স এসে বলল রুহুল কাকে যেন ডাকছে। এই কথা শুনে আজিজ চাচা ও তপু আইসিইউ তে গেল। তাঁরা গিয়ে দেখল রুহুলের সারা শরীর রক্তে লাল হয়ে আছে।
তপুঃ রুহুল এ তুই কি করলি! তুই কিডনী বিক্রি করে নিঝুমকে টাকা দিতে গেলি কেন? আমাকে বলতি আমি দিতাম।
রুহুলঃ আমি বাঁচবো না আমি জানি তাই তোর কাছ থেকে টাকা নেয় নি। পরে কে আবার এই টাকা শোধ করবে। আমি নিঝুম সম্পর্কে ডাক্তারের কাছে যখন গিয়েছিলাম তখন ডাক্তার বলেছিল যে নিঝুম বাঁচবে কিনা সন্দেহ আছে কারন তাঁর ক্যান্সার অনেক দিন হয়ে গেছে। তপু আমার একটা চিঠি তুই নিঝুম আসলে দিস, যদি ফিরে আসে। আমি হইত দেয়ার সুযোগ পাব না। তাঁর আগে আমাকে আমার মা-বাবার কাছে চলে যেতে হবে। আর যদি নিঝুম সেখানে থাকে তাহলে আমার সাথে ওর দেখা হবে। নিঝুম না বাঁচলে আমি বাঁচব না তাই আমি চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম।
তপুঃ তুই আমাদের ছেড়ে চলে যাবি কি বলিস রুহুল। তুই এই কাজ কেন করতে গেলি।
রুহুলঃ দেখ নিঝুম মারা গেলে ওর বাবা বাঁচবে না। তাছাড়া আমিও বাঁচব না। তাই এর চেয়ে ভাল আমি চলে যায় তাতে নিঝুম কষ্ট পাবে বা কষ্ট সইয়ে নিতে একটু কষ্ট হবে কিন্তু পরে তা ঠিক হয়ে যাবে। তাই দুই জীবন থেকে একজীবন যাওয়াটা ভাল।
আজিজ চাচাঃ ওরে রুহুল তোর মা-বাবা আমার হাতে ই মারা গেছে এখন তুই ও আমার হাতে...। আমি যে আর সহ্য করতে পারছি নারে রুহুল।
রুহুলঃ চাচা তুমি আমার জন্য যা করেছ তা আমি ভুলবো না। শুধু আমার মা-বাবা এবং আমার জন্য একটু দুয়া কর।
তপুঃ আমি অন্য সবাইকে আসতে বলছি। আমীন, সোহেল আসছে।
রুহুলঃ তারাতারি আসতে বল আমি যে আর বেশি সময় থাকব না রে।
তপুঃ রুহুল ওরে তুই কি বলিস আমাদের ছেড়ে চলে যাবি আমরা থাকব কি করে।
আমীনঃ রুহুল দেখ আমি ও সোহেল এসেছি।
রুহুলঃ তোরা আমাকে মাফ করে দিস দোস্ত। আমি তোদের মধ্যে আর থাকতে পারছি না। তপু দোস্ত আয় একবার আমার বুকে আয়। আর দেখা হবে না ভাল থাকিস।
এই বলে রুহুল তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। আর কান্নার রোল পরে গেল পুরো হাসপাতাল জুড়ে। কিছুক্ষণ পরে নিঝুম ফোন দিল। তপু ফোন ধরল।
নিঝুমঃ হ্যালো তপু আমি সুস্থ আমার অপারেশন সফল। একটু রুহুলকে দাও।
তপুঃ রুহুল নেই।
নিঝুমঃ নেই মানে?
তপুঃ ও আমার কাছে এই মুহূর্তে নেই ওর মোবাইল আমার কাছে। আমি আমার বাসাতে।
নিঝুমঃ তপু কাঁদছ কেন?
তপুঃ বাসায় জগড়া করেছি।
নিঝুমঃ ও কেঁদো না আর রুহুলকে বল আমাদের ফ্লাইট পরশুদিন সোমবার ওকে নিয়ে তোমরা চলে এসো বিমানবন্দরে। সকাল ৯টায়।
তপুঃ আচ্ছা ঠিক আছে আসব। এখন রাখি।
নিঝুমঃ বাই। 
অতঃপর রুহুলের দাফন-কাফন ও জানাযা শেষ হল এবং তাকে তাঁর মা-বাবার পাশে কবর দেয়া হল।
অবশেষে সোমবার এলো সবাই বিমানবন্দরে নিঝুমকে রিসিভ করার জন্য। সকাল ঠিক ৯টায় বিমান অবতরণ করল ঢাকায়। নিঝুম আসছে সবাই দেখল।
নিঝুমঃ ওমা সবাই আছ রুহুল কোথায়?
নিঝুম এর বাবাঃ হা রুহুলকে ডাক তাঁর জন্য আমার মেয়ে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
তপুঃ রুহুল তাঁর বাবা-মায়ের কবরস্থানের পাশে চলুন নিয়ে যায়।
নিঝুমঃ ওহ আজকে মনে হয় বাবা-মায়ের কথা বেশি মনে পরছে তাই কবর জিয়ারত করতে গিয়েছে। চল সবাই আগে আমি রুহুলকে দেখতে চাই। 
সবাই কবরস্থানে যাওয়ার জন্য রউনা হল। সেখানে গিয়ে সবাই নামল গাড়ি থেকে।
নিঝুমঃ কোথায় রুহুলকে তো দেখা যাচ্ছে না।
তপুঃ চল দেখবে। তখন রুহুলের কবর দেখিয়ে তপু এই যে রুহুল শুয়ে আছে অনন্তকালের জন্য তাঁর মা-বাবার সাথে।
নিঝুমঃ তপু তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?
তপুঃ না রুহুল আমাদের মাঝে আর নেই সে তুমি আসার ৩ দিন আগে আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গিয়েছে অজানাতে। তাঁর ফুসফুসে ক্যান্সার এবং দুটি কিডনী বিকল হয়ে গিয়েছিল। যার একটি তোমার টাকার জন্য বিক্রি করে দিয়েছিল।
তখন নিঝুম অঝোর ধারায় কাঁদতে শুরু করল। শুধু কাঁদছে আর কাঁদছে কোন কথায় যেন তাঁর মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। শুধু বলছে রুহুল আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে না। তপু রুহুলের লেখা চিঠিটি নিঝুম এর হাতে দিয়ে বলল, রুহুলের লেখা তোমার শেষ চিঠি। চিঠিটি ছিল।

প্রিয় নিঝুম,
আমি তোমারি ছিলাম এবং আছি ও থাকব। শুধু কিছু কারনে এই পৃথিবীতে তোমার সাথে থাকা হল না। রাগ করো না আমি তোমাকে বলে যাওয়ার সময় পায় নি। যদি পেতাম তাহলে হইত তোমার সাথে অনেক না বলা কথা বলে যেতাম। তুমি চলে গেলে তোমার বাবা এবং আমি দুইজন ই মারা যেতাম। কারন আমরা দুইজন ই তোমাকে অনেক ভালবাসি। তাই আমাকে ই চলে যেতে হল কারন আমি তোমাকে তোমার বাবা থেকে দূরে সরাতে চাই নি। আমি না হয় আমার ভালবাসার মানুষটির জন্য ঝরা ফুলের মত ঝরে গেলাম। আমি যখন তোমার ব্যাপারে ডাক্তার এর সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম তখন ডাক্তার আমাকে বলেছিল তোমার বেঁচে থাকাটা উনি নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। তাই যদি তুমি চলে যাও, এর আগে ই আমি ওপারে গিয়ে বসে থাকব তোমার অপেক্ষায়। তাই আমার এই চলে যাওয়া। আমার বন্ধুরা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে তোমাকে বিদেশে পাঠাতে তাদেরও অবদান আছে তোমার এই জীবনে। তাই তাদেরকে কষ্ট দিও না। আর আমার চাচাকে তুমি দেখ কারন তিনি হইত আমাকে ভুলতে পারবেন না। আমার মা-বাবা এবং আমার মৃত্যু আমার চাচা দেখেছে। আমার চাচা অনেক ভাল। শুন তুমি এখনও কাঁদছ কেন? তুমি তো আমারই মত রাতের আকাশ দেখ। হইত আমাকে দেখ সেই আকশের হাজার তাঁরার মাঝের ধ্রুবতারাতে। আমি তোমাকে প্রতিদিন ই দেখব সেই আকাশ থেকে। শুধু কাছে আসতে পারব না। শুধু একটা ব্যাথা নিয়ে আমি চলে গেলাম তোমাকে আমি এই পৃথিবীতে পায় নি। আসলে আমার জীবনটা এমনি এক কষ্টের যা চাই তা কখনও পায় নি। আমাকে একা ফেলে আমার বাবা-মা ও চলে যায়। আমার জীবনের কষ্টের প্রমাণ তুমি পেলে। তুমি শুধু বলতে আমার জীবনে কোন কষ্ট নেই। কিন্তু দেখেছ নিয়তির নির্মম পরিহাস। আর তোমার কাছে আমি একটি জিনিস রেখে গেলাম যা হল আমার ডায়েরীটা। সেটা দেখে তুমি আমাকে ভালবেসেছিলে। ভালবেসেছিলে আমার কষ্ট গুলোকে। আজো সেই আমার রেখে যাওয়া ডায়েরী নিয়ে বেঁচে থাক এবং সুখে জীবনযাপন করো। আমি ঐ দূর আকাশ থেকে তোমার মঙ্গল কামনা করে যাব। শুভ বিদায়।

ইতি
তোমার অভাগা ভালবাসা
রুহুল

 এই চিঠি পরে নিঝুম অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তারপরে কিছুক্ষণ পড়ে জ্ঞান আসলে ই রুহুল বলে চিৎকার করে। এইভাবে অনেক দিন অতিবাহিত হল। নিঝুম বিয়ে করে নি। নিঝুম রুহুলের লেখা সব কবিতা, কাব্য, চিঠি ও রুহুলের তোলা ছবি গুলো দিয়ে একটি রুহুল স্মৃতি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে। যেটিতে নিঝুম দিনের বেশির ভাগ সময় কাটায় এবং অনেক আবেগ-অনুভূতি লিখে।

নিঝুম আজ ৪০ বছরের বৃদ্ধা বিয়ে করে নি শুধু রুহুলের জন্য আজো তাঁর চোখে পানি আসে রুহুলের কথা মনে করে। রুহুলের ডায়েরী আজো বৃদ্ধা নিঝুম প্রতিদিন পড়ে আকাশ পানে চেয়ে থাকে নিস্তব্ধ রাত্রিতে। আজ নিঝুম এর বাবা ও রুহুলের চাচা নেই। তাদের এই চলে যাওয়া নিঝুম মেনে নিতে পারে কিন্তু রুহুলের চলে যাওয়া আজো নিঝুম মেনে নিতে পারে নি। এইভাবে রুহুলকে ভালবেসে পুরোটা জীবন কাটিয়ে দিল বৃদ্ধা নিঝুম। মাঝে মাঝে রুহুলের সব ফ্রেন্ড তাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রুহুলের জন্য নিঝুমের গড়া জাদুঘর পরিদর্শন করতে যায় এবং নিঝুমের সাথে কথা হয়। তাঁর ইচ্ছে তিনি পরকালে গিয়ে রুহুলের সাথে আবার ভালবাসার পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হবেন। এইভাবে ই একটি ভালবাসার পৃথিবীতে জীবন সমাপ্তি হল।

No comments:

Post a Comment