রুপমের
ভালবাসা এবং চৈতির ভাল লাগা
রাজন আহমেদ
রুপম বিবিএ তে রাজশাহী ইউনিভার্সিটি তে
পড়ে। আর অন্য পরিচয় ইউনিভার্সিটি তে এক নামে পরিচিত তার গানের গলা দিয়ে। রুপম
ইউনিভার্সিটি তে আজকে শেষ ক্লাস কারন আজকের পড়ে রুপম এক সপ্তাহ ক্লাস করবে না। ওর
ছোট বোনের বিয়ে। রুপম সব বন্ধুদের দাওয়াত দিল বিয়েতে যাওয়ার জন্য। শীতল, তপু,
রুমেল, রিতু, নিশি, জেরিন এবং চৈতিকে দাওয়াত দিল। সবাই রুপমের কাছের বন্ধু হলেও
চৈতির সাথে রুপমের সম্পর্ক তেমন কাছের নই। চৈতি জেরিন, নিশি, রিতুর বান্ধবি হিসেবে
দাওয়াত পায়। তারপর রুপম বাড়িতে চলে যায়।
রুপম তিন দিন হল বাড়িতে এসেছে। আজ
রুপমের বন্ধুরা এসেছে। রুপমের ছোট বোনের বিয়ে। বিয়ে মাত্র দুদিন বাকি। বাড়িতে অনেক
লোকজন। তাদের মধ্যে রুপমের অনেক বন্ধুরা আছে যারা রুপমের ইউনিভার্সিটি থেকে এসেছে।
তাদের মধ্যে রুপমের অনেক মেয়ে বন্ধু আছে। রুপম ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছে। বাড়ি থেকে বাজারে
আবার বাজার থেকে বাড়িতে এর মধ্যে সারা দিন কেটে যাচ্ছে রুপমের। রুপমের বন্ধুরা ও
বাড়ি-ঘর সাঁজাতে লেগে পড়েছে। এইসব টুকিটাকি কাজ করতে করতে সন্ধ্যা নেমে এল। রুপমের
বন্ধুরা উঠানের মধ্যে আড্ডায় বসে পড়ল। রুপম এখনও বাড়ি ফেরেনি বাজার থেকে। শীতল রুপমের
বন্ধু খুব ভাল গিটার বাঁজায়। শীতল গিটার বাজাচ্ছে আর রুপমের বন্ধুরা সবাই বসে বসে
শুনছে। ইতিমধ্যে রুপম বাড়ি ফিরে আসে। রুপমের খাওয়া-দাওয়া শেষে বন্ধুদের সময় দিতে
তাদের সাথে আড্ডায় বসে পড়ে।
রুপমঃ কিরে গিটার বাদক কেমন চলছে
তোদেরকে তো আমি সময় ই দিতে পারছি না।
শীতলঃ কি করব বসে পড়লাম আড্ডায়।
রুপমঃ তো আমাদের এলাকা কেমন লাগছে?
শীতলঃ খুব সুন্দর। তাই তো গিটার দিয়ে এত
সুন্দর সুর বের হচ্ছে।
রুপমঃ তাই নাকি! তো মেডাম আপনাদের কি
খবর?(বান্ধবীদের উদ্দেশ্য করে)
রিতুঃ হ্যাঁ ভাল লাগছে। খুব সুন্দর
বাতাস আর আমাদের আড্ডা সব নিয়ে অন্য রকম। আর দিনে কিছু ছবি তুলেছি। তোদের এলাকাটা
অনেক সুন্দর তো তাই।
রুপমঃ যাহুক সবার ভাল ই লাগছে আমি আবার
মনে করছিলাম যে কার কেমন লাগে। গরীব মানুষের কুটির তো তাই।
শীতলঃ মামা ভাব মারলা নাকি!
রুপমঃ ভাব মারার কি আছে। যা সত্য তা ই
বললাম।
শীতলঃ আচ্ছা বাদ দে। তোদের দিঘি টা অনেক
সুন্দর লাগছে এই চাঁদের আলোর মধ্যে। গিটার এর একটা সুর মনে পড়ছে আমি বাঁজায় তোরা
শুন।
জেরিনঃ আরে গিটার এর সাথে কারোকে গান
গাইতে হবে তাহলে অনেক উপভোগ্য হবে আমাদের আড্ডা টা।
শীতলঃ তাহলে গান গাইবে কে?
নিশিঃ আমাদের মাঝে রুপম ছাড়া কেউ গান
পারে না রুপম গান গাইবে।
রুপমঃ না আমি না আমার এই গানের গলা
শুনলে মানুষ কি না কি বলে। তাছাড়া এই গ্রামে কেউ জানে না আমি গান বলে কিছু জানি।
চৈতিঃ গানের গলা ভাল তো তাই এত তেল দিতে
হচ্ছে। ইউনিভার্সিটি তে তো গানের প্রাইজ কেউ নিতে পারে না তুমি ছাড়া। তাহলে গাইতে
সমস্যা কোথায়!
জেরিনঃ চৈতি তো ঠিক ই বলেছে।
তপুঃ তাহলে আড্ডা হবে না। তোর গ্রামে
আসলাম আর তোর গান গাইতে এত তেল মারা লাগবে কেন। উঠে যাব নাকি?
রুপমঃ আচ্ছা বাবা গাইছি তবে যে গান গাইব
সেটা ডুয়েট তাহলে আমার সাথে গলা মিলাবে কে?
শীতলঃ কোন গানটা গাইবি?
রুপমঃ মেঘমিলন তাঞ্জিব ভাইয়ার গানটা।
শীতলঃ তাহলে এইটা চৈতি কে দেখেছিলাম
একদিন গুন গুন করে গাইছে।
রিতুঃ তাহলে চৈতি তোর সাথে গলা মিলাবে।
শুরু কর।
তারপর, রুপম “মেঘমিলন... ” গান ধরল। আর
এই দিকে শীতল গিটার বাজাচ্ছে।
গানটার লাইরিক্স হল,
(রুপম) শীতল বাতাসে,
দেখেছি তোমায়,
মেঘমিলনে চেয়ে রাগ করো না,
মন চাই তোমায় আজি রাতে...রাতে...
(চৈতি) বৃষ্টি তো থেমেছে অনেক আগে ই,
ভিজেছি আমি একাই,
আসতো যদি বিভীষিকা,
খুঁজেও পেতে না আমায়।
(রুপম) মেঘমিলনে চেয়ে রাগ কর না,
মন চাই তোমায় আজি রাতে...রাতে...
(রুপম) ঝুম ঝুম পাতালি হাওয়ার সাথে,
খুঁজেছি শুধুই তোমায়,
পিছাতে পারি নি ঝরো হাওয়া,
খুঁজেই নিয়েছি তোমায়,
ভুলে গিয়েছি মন শত অভিমান,
মন চাই তোমায় কাছে পেতে।
গানটা শেষ হওয়ার পর প্রশংসায় সবাই
পঞ্চমুখ হয়ে গেল। কয়েকদিন পর ইউনিভার্সিটি তে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আছে সেই
অনুষ্ঠানে এই গানটা গাওয়ার সিদ্ধান্ত হল তাঞ্জিব ভাইয়ার অনুমতি সাপেক্ষে। চৈতি ও
রুপম গানটা গাইবে। যাহুক রাতের আড্ডা শেষ সবাই যে যার জায়গা তে ঘুমাতে চলে গেল।
রুপমের সাথে তপু, রুমেল, শীতল আর বান্ধবীরা রুপমের বোনের সাথে ঘুমাল।
সকালে ঘুম থেকে উঠে রুপমের খালা রুপম
এবং রুপমের বন্ধু শীতল ও বান্ধবী জেরিন এবং চৈতিকে নিয়ে বের হল কিছু শপিং করার
উদ্দেশে। জেরিন ও চৈতির যা পছন্দ আছে দেখা যাচ্ছে রুপমের খালার ও তা পছন্দ হচ্ছে।
কিন্তু রুপম ও শীতলের পছন্দের কোন দাম দিচ্ছে না কেউ। যাহুক শপিং করে সবাই বাড়ি
ফিরে।
সন্ধ্যায় হলুদ ছোঁয়া শুরু হল। রুপম এবং
তার বন্ধুরা পাঞ্জাবী পড়েছে। আর রুপমের বান্ধবীরা শাড়ি পড়েছে। হটাত রুপমের চোখ পড়ে
গেল একটি মেয়ের দিকে। রুপম তার চেহারা দেখতে পারছে না কিন্তু রুপম যেন অস্থির হয়ে
গেল দেখার জন্য। রুপম অনেক কষ্টে মেয়েটিকে দেখার পর নিজে ই স্তব্ধ হয়ে গেল। মেয়েটি
চৈতি। রুপম অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এত সুন্দর চৈতি! চৈতি ও রুপমকে দেখল তার দিকে
তাকিয়ে আছে কিন্তু কিছু বলল না।
রুপম ও তার বন্ধু-বান্ধবীরা এক সাথে
বসল। রুপম ও তার বন্ধুদের রুপমের ছোট বোনকে হলুদ দেয়া শেষ। সবাই হলুদ নিয়ে খেলছে।
রুপমের ছোট ভাই হটাত করে পিছন থেকে রুপমকে হলুদ লাগিয়ে দেয় দুষ্টমি করে। রুপম
খানিকটা বিরক্ত বোধ করার সাথে সাথে শীতল ও রুপমকে কিছু হলুদ লাগিয়ে দিল। তখন রুপম
কি আর চুপ করে বসে থাকতে পারে। রুপম ও শুরু করল হলুদ নিয়ে খেলা। এদিকে নিশিকে হলুদ
লাগিয়ে দেয় তপু। দেখা যায় সবাই হলুদ নিয়ে খেলা শুরু করল। ঠিক তখন রুপম হলুদ নিয়ে শীতলকে
দিতে গেলে শীতল সরে যাওয়ার ফলে সেই হলুদ লেগে যায় চৈতির গালে। চৈতি রেগে-মেগে আগুন
হয়ে গেছে। রুপম সরি বলল চৈতিকে কিন্তু চৈতি তা না মেনে রুপমের সারা মাথায় হলুদ এবং
বালি দিয়ে দেয়। এতে তো আরও করুন অবস্থা হয়ে গেল রুপমের।
যাহুক হলুদ শেষ হল এবার সবাই ঘরে চলে
গেল। কিন্তু রুপমের মাথার বালি তো যাচ্ছে না। রুপম চৈতির কাছে গেল-
রুপমঃ এখন যদি আমার মাথার চুল পেকে যায়
তখন কি হবে।
চৈতিঃ যা হবার হোক। আমাকে কোথায় হলুদ
দিয়েছ দেখেছিলে।
রুপমঃ ভুল করে লেগে গেল আমি দিয়েছি
নাকি।
চৈতিঃ এখন যাও নিজের পথে যাও আমরা
ঘুমাব।
রুপম চলে এল। মাথায় শ্যাম্পু করার পরও
এই বালি যাচ্ছে না। কি করার রাতে তো বেশি কিছু করা যায় না রুপম ঘুমিয়ে পরল।
সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার কাজে যেতে হল
রুপমকে। রুপম বাড়ি ফেরার পর চৈতির সাথে কথা বলছে না। চৈতি বোঝাতে পারছে যে রুপম
রাগ করেছে। রুপম রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। চৈতি গেল-
চৈতিঃ তুমি কি রাগ করেছ?
রুপম কোন উত্তর দিল না।
চৈতিঃ আমি কি গাছের সাথে কথা বলছি নাকি?
রুপমঃ না আমার সাথে ই বলছ কি হয়েছে
বল...?
চৈতিঃ আমি সরি।
রুপমঃ কি জন্য জানতে পারি।
চৈতিঃ তোমার মাথায় বালি দেয়ার জন্য।
রুপমঃ আরে আমি রাগ করি নি আমি দেখছিলাম
তুমি আমাকে কিছু বল কি না! (হেসে)
তখন চৈতি আর এক মুহূর্ত ও সেখানে দাঁড়ায়
নি। যাহুক বিয়ের দিন নামাজ শেষ হল বর আসার সময় হল। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সব শেষ হল।
বর যাবার সময় হল। সবাই কান্না-কাটি করছে। রুপম চেয়ে দেখে চৈতি ও কাঁদছে। রুপম
জিজ্ঞেস করল চৈতি উত্তর দিল রিমি(রুপমের বোন) চলে যাচ্ছে তাই কাঁদছে। যাহুক বর
বিদায়ের পর রাতে সবাই একসাথে বসে গল্প করছে। রুপমের খালা বলছে ঘরে আর কোন মেয়ে
নাই। তাই এইবার ছেলে দিয়ে মেয়ে আনতে হবে। রুপম এই কথা শুনার পর চৈতির দিকে তাকাল।
দেখল চৈতি সহ সবাই এই কথা শুনে হাসছে।
পরদিন সবাই রুপমের বন্ধুদের চলে যাওয়ার
দিন সবাই যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ঘুমিয়ে পরল। পরদিন খুব ভোরে তাঁরা রউনা দিল
ইউনিভার্সিটি এর উদ্দেশে। রুপমদের বাড়ি এখন খালি। রুপমও বউ ভাত এর পরে
ইউনিভার্সিটি তে চলে যাবে।
সব কিছু শেষ হল রুপম ইউনিভার্সিটি তে
চলে আসল। ক্লাস চলছে নিয়মিত। কিছু দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রুপম পারটিসিপেট করবে।
চৈতি ও রুপম নিয়মিত প্র্যাকটিস করছে। অবশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দিন আসল। রুপম
ও চৈতি তাদের গান গাইল এবং কিছু নাচ করল গানের সাথে। এইটার কারনে তাঁরা একটি
প্রাইজ পেল। যার কারনে চৈতিকে বেশ উৎফুল্ল লাগছে। ইউনিভার্সিটি জুড়ে তাদের গুনগান।
কেউ বলছে তাঁরা প্রেম করে না হলে এই রকম গান আর নাচ করা সম্ভব না।
কিছুদিন পর রুপমের বাড়ি থেকে ফোন আসল
তাকে বাড়ি যেতে হবে। রুপম বাড়ি গেল। আর এইদিকে চৈতি রুপমের প্রেমে পড়ে গেল। জেরিন,
নিশি তাদের সবাইকে চৈতি সব কিছু খুলে বলল। তাঁরা বলল রুপম জানে কিনা! কিন্তু চৈতি
স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারে নি। তাঁরা বলল রুপমকে সব কিছু বলবে।
রুপম বাড়ি থেকে ফিরল। রুপমের মনটা খারাপ
কিন্তু কাউকে সে বোঝতে দিচ্ছে না। নিশি, জেরিন, রিতু রুপমের বন্ধু শীতল, তপু,
রুমেল কে সাথে নিয়ে রুপমকে সব কিছু বলেছে। রুপম চৈতিকে রুপমের সাথে দেখা করতে বলে।
তারপর দিন রুপমের চৈতির সাথে দেখা। রুপম
তার বাড়িতে যাওয়ার পর কি হল চৈতিকে বলল। রুপমের বিদেশ চলে যেতে হবে কারন তার বাবা
এখন কিছু উপার্জন করতে পারছে না। রুপমের বাবা অসুস্থ। এর মাঝে রুপমের খালাত ভাই
বলেছে রুপমকে কাতার নিয়ে যাবে। সংসারের হাল ধরতে সে যেতে রাজি হয়ে গিয়েছে। রুপম
চৈতিকে বলল, যে দিন তাকে শাড়ি পরা দেখেছিল সেদিন থেকে তাকে ভাল লাগে। পরে এক সাথে
গান গাওয়া থেকে ভালবাসার সৃষ্টি হয় তার মাঝে কিন্তু চৈতিকে কিছু বোঝতে দেয় নি কারন
চৈতি যদি আবার কিছু মনে করে। রুপম বলল আমি এখন কিছু করতে পারব না বিদেশ থেকে এসে
কিছু করতে হবে। যদি রাজি না থাক তাহলে যে যেখানে আছি সে খানে থেকে যাব। কিন্তু
চৈতি রাজি হল। রুপম আর এক মাসের মত আছে তার পর সে চলে যাবে। এর মধ্যে চৈতির সাথে
সম্পর্কটা আরও গভীর হয়ে গেল। অনেক কিছু হল এর মাঝে। যা ভুলার নই।
অবশেষে রুপম চলে গেল কাতারে। রুপম কথা
দিয়ে গেল দু বছর পর চৈতির বিবিএ সম্পন্ন হওয়ার পর এসে বিয়ে করবে। বিদেশ যাওয়ার পর
দিন নেই রাত নেই চৈতির সাথে কথা বলে রুপম। চৈতির জন্য অনেক কিছু পাঠিয়েছে রুপম।
এইভাবে দুইটি বছর পার হল। এর মধ্যে রুপমের বাবা মারা যায়। রুপম এক মাস পরে দেশে
আসছে চৈতিকে জানিয়ে দিল। রুপম আসার ৬ দিন আগে থেকে চৈতির মোবাইল বন্ধ। কি করা যায়
কোন উপায় ও খুঁজে পাচ্ছে না। চৈতি নাকি ইউনিভার্সিটি তে আসে না অনেক দিন যাবত।
তারপর রুপম দেশে আসল এসে শুনে চৈতির
বিয়ে হয়ে গেছে কিছুদিন আগে। রুপমের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। অনেক চেষ্টা করছে রুপম
চৈতির সাথে দেখা করার জন্য কিন্তু কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। অবশেষে জানতে পারল আর
৩ দিন পর চৈতি কানাডায় চলে যাচ্ছে বর সাথে একেবারে। রুপম চৈতির ফ্লাইট এর দিন
এয়ারপোর্ট এ আসল। অনেক কষ্টের পর এয়ারপোর্ট এর ভিতরে গেল এবং চৈতিকে দেখল তার বর
সাথে। চৈতি একা দাঁড়িয়ে আছে। আর চৈতির বর পাসপোর্ট ওকে করছে। রুপম গিয়ে চৈতির
সামনে দাঁড়াল। চৈতি অবাক হল এবং চেয়ে থাকল। রুপম বলল তুমি কেন আমার সাথে এমনটি
করলে? চৈতি বলল, কি করব আমি। আমার কিছু করার ছিল না। আমার বাসা থেকে বাবা-মা জোর
করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। রুপম বলল, এত দিনের এত স্মৃতি এত কিছু তুমি এক কথায় বর্ণনা
করতে পারলে। আসলে চৈতি তুমি যেটা করেছ সেটা ভাল লাগা, আর আমি যেটা করেছি সেটা
ভালবাসা। এই দুইটার মধ্যে যে পার্থক্য তা তুমি আমাকে বোঝিয়ে দিলে। যাহুক ভাল থেক।
সুখে থেক এই কামনা করি। এই বলে চৈতির কাছ থেকে চলে রুপম চলে আসল।
তারপর গান হয়ে গেল তার সঙ্গী। একটা
ব্যান্ড দল করল শীতলকে সাথে নিয়ে। সারা দেশে তার নাম ছড়িয়ে পরল। অনেক মেয়ে এখন
তাকে প্রপোজ করছে কিন্তু সে এই সবে একদম নজর দিচ্ছে না কারন তাকে যে ব্যাথা দিয়েছে
তা কোন দিন ভুলার না। হটাত একদিন রুপমের মোবাইল এ কল। রিসিভ করার পর একটি মেয়ে।
গলাটা খুব পরিচিত মনে হচ্ছে রুপমের। রুপম তৎক্ষণাৎ বোঝতে পারল এটি চৈতি। রুপম ফোন
রেখে দিল পরে আবার ফোন একটি ছোট ছেলে। বলছে, আমি আপনার খুব ভক্ত আপনার গান আমি
অনেক পছন্দ করি। তারপর ফোন নিল চৈতি। রুপম জানতে চাইল এটা কে চৈতি বলল আমার ছেলে।
চৈতি রুপম বিয়ে করেছে কিনা জানতে চাইল। রুপম বলল, কাঁটা গায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছ।
কিভাবে বিয়ে করব যে দুঃখ পেয়েছি তা তো ভুলার নই। চৈতি অনেক অনুরোধ করল বিয়ে করে
সংসার করার জন্য কিন্তু কিছুতে কোন সারা দিল না রুপম। এইভাবে মাঝে মাঝে চৈতির ছেলে
এবং চৈতি রুপমের সাথে কথা বলে। অবশেষে রুপমের এক ভক্ত বড়লোক বাপের একমাত্র মেয়ে
রুপমকে বিয়ে করার প্রপোজ দিয়েছিল কিন্তু রুপম রাজি না হওয়াতে সে আত্মহত্যার পথ
বেঁছে নিয়েছিল। পরে বাধ্য হয়ে রুপম তাকে বিয়ে করে। এবং বোঝতে পারে তার জন্য সাধারন
মেয়ে জীবন দিতে পারে কিন্তু চৈতি তা পারে না। বিয়ের পর থেকে চৈতি আর কল দেয় না
রুপমকে। রুপম এখন এক সন্তানের জনক। এইভাবে চলছে রুপমের জীবন।
================================================================
আমার
পরাজিত ভালবাসা
রাজন আহমেদ
ঝড়ের দিন। বাংলা বৈশাখ মাস। তপু ফোন
ধরছে না। কি না হলো আবার। খুব চিন্তায় রূপা। হটাত জানালায় ঢিল। রূপার মনে হলো
গ্লাস যেন ভেঙে ই গেলো। রূপার মা রূপাকে বলল কি হয়েছে? রূপা বলল, হইতো মা গাছ থেকে
আম এসে পড়েছে। জানালা একটু ফাঁক করে তাকিয়ে রূপা দেখল তপু দাড়িয়ে আছে। রূপা তো
অবাক কি পাগল টাইপের ছেলে তপু। রূপা ইশারা করে বুঝাতে চাইল তুমি এখন এখানে কেন?
তপু জানালার কাছে গিয়ে বলল, দুজনে তো আম কুঁড়াতে পারবো না তাই আমি কুড়িয়ে তোমাকে
দিয়ে গেলাম। তখন রূপা হাসি দিয়ে একটি আমকে দু ভাগ করে এক ভাগ নিজে খেতে লাগলো আরেক
ভাগ দিয়ে দিল তপুকে। তপু খেতে খেতে বাড়ি চলে গেলো।
পরদিন সকালে রূপার ফোন তপুকে, এই পাগল
ছেলে এখনও ঘুমাচ্ছো একটু আসবে কলেজে আমি আছি। তপু, ওকে আসছি ১০ মিনিট অপেক্ষা করো।
এই বলে তপু ফোন রেখে কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে রওনা দিয়ে দিল। পৌঁছে দেখে রূপা
দাড়িয়ে আছে আকাশী কালারের সালওয়ার কামিজের সাথে সাদা উরনা, চুল গুলো ছাড়া হাতে
চুলের বেনটা লাগানো চুল গুলো মনে হয় ভিজা। এককথায় সকালে যেন পরী নেমে এসেছে দেখা
করতে। তপু কাছে গিয়ে রূপাকে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করলো। রূপা কোন কর্ণপাত না করে
জিজ্ঞেস করলো এতো রাতে তুমি আম কুড়িয়েছ কেন? তপু, আগে বলো তুমি খুশি হও নি? রূপা
কোন উত্তর না দিয়ে চেয়ে থাকল। তপু, আমি জানি তুমি খুশি হয়েছো। আর আমার জন্য ভাবছো
ঝড়ের রাতে তা কিছু না। ঝড়ও জানে তোমার জন্য আম কুড়িয়ে আমি নিয়ে যাবো তাই হইতো কিছু
হল না। রূপা, আচ্ছা তুমি এতো গা-ভাসিয়ে চলো কেন! শুধুই আধ্যাত্মিক কথাবার্তা। তপু,
রূপা আসলে আমি এমন ই। তখন মন চেয়েছে তাই করেছি। আচ্ছা এখন কি শুধু দাড়িয়ে থাকবো
নাকি কিছু খাওয়াবে সকালে কিছু খাই নি। রূপা, পেট একদম হাতে নিয়ে চলে এসেছো খেতে
আচ্ছা চলো কি আর করার খাওয়ায় তোমাকে। রেস্টুরেন্টে বসে রূপা, আচ্ছা শুনো একটা কথা
তুমি আমাকে এতো রাতে ঝড়ের মধ্যে আম কুড়িয়ে দিয়ে এসেছো কেন? তপু, আগে বলো তুমি
আমাকে কেন অর্ধেকটি আম নিজে রেখে বাকি অর্ধেকটি আমাকে দিয়েছিলে? রূপা, তুমি শুধু
প্রশ্নের উপর প্রশ্ন করো বলো না আমার খুব শুনতে ইচ্ছে করছে। তপু, তোমার শুনতে ইচ্ছে
করছে আর আমার কি করছে না! রূপা, থাক তোমার আর বলা লাগবে না। তপু তবে যা ই বলো আমি
গতকালের স্মৃতি ভুলতে পারবো না। তবে কাল খুব চিন্তা হচ্ছিল তোমার মোবাইল এ ফোন না
ঢুকাতে।
যাহুক খাওয়া শেষ করে অনেকক্ষণ ঘুরাঘুরি
করার পর নিজ বাসায় চলে যায়। তাদের খুব ইচ্ছে একে অপরের মুখ থেকে ভালোবাসার কথা
শুনতে। কিন্তু তপু একটু গা ভাসা ছেলেদের মত সব কিছুতে ই শুধু বাম হাত। অনেকটি দিন
কেটে গেলো কারো মুখ থেকে কেউ বের করতে পারল না যে, আমি তোমাকে ভালবাসি। এই নিয়ে
যেন তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। হার না মানা হয়ে তারা এগিয়ে যেতে লাগলো।
১৪ ফেব্রুয়ারী ভালবাসা দিবস। দিনের
সকালে রূপা ফোন করে ঘুম থেকে তপুকে উঠালো বের হবে বলে। রূপা বের হয়ে কলেজের চত্বরে
এসে দাড়িয়ে আছে। তপুর আসার নাম নেই। রূপার পরনে ছিল সাদার মধ্যে লাল বর্ডারের
শাড়ি, কপালে একটি লালটিপ, চুল গুলো ছাড়া, হালকা লিপিস্ট্রিক ঠোঁটে। হটাত রিক্সা
দিয়ে এসে নামলো তপু। একদম সিম্পল প্রতিদিনের সাঁজে তপু। দেখে রূপা রাগ করে নি কারণ
আজ একটি ভালো দিন। তপু একটি গোলাপ নিয়ে আসলো এবং রূপার চুলে তা গেঁথে দিল। তপু,
দেখো তো এখন কেমন পরিপূর্ণ লাগছে তোমায়? রূপা, আমি তো দেখাতে এসেছি তোমায়। তোমার
ভালবাসায় সাজিয়ে নাও আমায়। তপু, তাইতো একটি সুন্দর অপূর্ণ জিনিস তোমায় দিলাম। রূপা,
না এটি আমার রূপের পূর্ণতা আর তুমি আমার হৃদয়ের পূর্ণতা। তুমি ছাড়া এ হৃদয় অপূর্ণ।
দুজন একটি রিক্সা ভাড়া করে নিল সারা দিন
ঘুরার জন্য। রিক্সাতে উঠে বসল দুজনে। রূপা তপুর হাত ধরে আছে। রিক্সা চলছে নীরব
দুজনে। নিরবতা ভেঙে রূপা, কি কিছু বলবে না। তপু, কি বলবো ঘুরে ই যেন শান্তি
পাচ্ছি। হটাত রিক্সা আরেকটি রিক্সার সাথে ধাক্কা খেল। রূপা তপুর হাত ধরাতে তপু
ব্যথা পাওয়া থেকে বাঁচল। তপু, দেখেছো এই হলো তুমি আমার সাপোর্ট। তুমি থাকলে যুদ্ধ
করতে প্রস্তুত আমি। রূপা, এমন হয়ে ই সারা জীবনটি কাটাতে চাই তোমার সাথে।
রিক্সা রেল লাইন অতিক্রম করছে। পর
মুহূর্তে দু’জন
ই রিক্সা থেকে নেমে রেল লাইনের একটি ব্রিজ হাতে হাত রেখে অতিক্রম করে লাইনের পাশে
গাছের নিচে বসল। তপু হাত দেখছে রূপার। রূপা, কি দেখছো? তপু, দেখছি এ হাত কখন না
ছেড়ে চলে যায় আমায়। রূপা, তাহলে ধরলে কেন যখন এ হাত চলে যাবে। তপু, এ হাত যেন না
যায় তাই ধরলাম। অপলক দৃষ্টিতে দু জন চেয়ে রইল একজনের দিকে আরেকজন।
অনেক কথার পর দু জনে রিক্সা করে সূর্য
ডোবার ক্ষণে বাসায় ফিরে এলো। তপু রূপাকে রাতে ফোন করে, রূপা, সব কিছু বলা হল
কিন্তু আজো বলা হলো না যা তুমি শুনতে চাও। রূপা, এখন বলবে? তপু, না তুমি আগে বলো
পরে আমি বলবো। আমি হারতে চাই না। রূপা, আমিও হারতে চাই না বলবো না।
মুহূর্তে ঝড় এসে গেলো। কারেন্টও চলে
গেলো। তপু, রূপা, কারেন্ট চলে গেলো মোবাইল এ চার্জ নেই। ব্যাটারি লো দেখাচ্ছে।
শুনো কারেন্ট আসলে চার্জ করে ফোন দিবো।
লাইন কেটে তপু কেমন জানি হয়ে আছে তাকে
আজ এখন ই বলতে হবে ভালবাসি তোমায়, রূপা। মোবাইল হাতে নিয়ে ভয়েস রেকর্ড করলো তপু।
রূপা, আমি থাকতে পারছি না তাই বলতে
হচ্ছে। আমি তোমার কাছে হেরে গেলাম। আমি তোমাকে ভালবাসি, রূপা। খুব বেশি ভালবাসি।
এইগুলো বলে ভয়েস রেকর্ড করে রূপাকে
পাঠাল তপু। রূপা তো খুশিতে আত্মহারা। রূপা ফোন করলো তপুকে কিন্তু মোবাইল বন্ধ।
রূপা ভালবাসার কথা মোবাইল এ ই বলতে চাই সরাসরি বলতে পারবে না কিন্তু চার্জ না
থাকাতে তপুর মোবাইল বন্ধ। রূপা ঠিক করলো সরাসরি ই বলবে। ক্ষণিকে ই রূপার মন বলছে
তপু তার বাসায় আসবে। রূপা একটি হলুদ শাড়ি পরে, কপালে টিপ, চুল গুলো ছেড়ে বসে আছে
তপুর অপেক্ষায়। বসে বসে হটাত যে কখন টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলো।
ঘুম থেকে রূপা উঠে দেখে সকাল। তপু আসলো
না। ফোন দিল তপুকে মোবাইল বন্ধ বাজে সকাল ৯ টা। রূপার মা রূপাকে বাহিরে কে যেন
দাড়িয়ে আছে দেখতে বলল। রূপা দরজা খুলে বাহিরে গিয়ে দেখল তপু মাথায় ছাতা দিয়ে
দাড়িয়ে আছে, হাতে একটি আম, পড়নের কাপর গুলো ভিজা। রূপা দেখে ই এগিয়ে গিয়ে জানতে
চাইল সকালে কেন এসেছে। তাতে তপু কোন উত্তর দিল না। উত্তর না দেয়াতে রূপা তপুকে ধরল
আর সাথে সাথে পরে গেলো তপু মাটিতে। রূপা বুঝতে পারল রাতের ঝড় কেড়ে নিয়েছে তপুকে।
তখন ই শুরু হলো রূপার কান্নার বাধ ভাঙার আওয়াজ। শুধুই রূপা বলছে, বলতে পারিনি আমি
তোমায়। তুমি আমায় হারিয়ে দিয়ে গেলে। তুমি আমায় হারিয়ে দিয়ে গেলে।
=================================================
No comments:
Post a Comment